সরকারি অনুমোদনে স্কুল চালু হওয়ার পর দশ মাস পেরিয়ে গেলেও ক্লাসরুম তৈরির জন্য মেলেনি কোনও বরাদ্দ। এমনকী, বরাদ্দ না মেলায় এখনও পর্যন্ত স্কুলে চালু হয়নি মিড-ডে মিলও। শুধু তাই নয়, সরকারি উদ্যোগে স্কুলে বিদ্যুতের সংযোগ না পৌঁছনোয় প্রচণ্ড গরমে ক্লাস করতে গিয়ে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তিনগর এলাকার স্নেহলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি দিনই পড়ুয়াদের সংখ্যা কমছে বলে অভিযোগ উঠছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তৈরি স্কুলের একমাত্র টিনের তৈরি ক্লাসরুমে বসার জায়গার অভাব-সহ মিড-ডে মিল রান্না না হওয়ায় ও গরমের কারণে গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রথম-চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৮০ জন পড়ুয়ার মধ্যে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন করে পড়ুয়া স্কুলে আসছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গত প্রায় ছ’মাস ধরে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতরকে একাধিক বার লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। ফলে এলাকার পড়ুয়াদের পঠনপাঠন বিঘ্নিত হচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুরের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক বাদলকুমার পাত্রের দাবি, প্রশাসনিক কিছু প্রক্রিয়া পরিচালনার কাজে সাময়িক দেরি হওয়ার কারণে ওই স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল ও আর্থিক বরাদ্দ করতে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতরের প্রকল্প আধিকারিক প্রবীর পাত্র বলেন, ‘‘ওই স্কুলে ক্লাসরুম তৈরির জন্য দীর্ঘ দিন আগেই একটি বাজেট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শিক্ষা দফতর টাকা বরাদ্দ না করায় ওই স্কুলে ক্লাসরুম তৈরির কাজ আটকে রয়েছে।’’
পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর দিনাজপুর জেলা গঠনের পর দু’দশক পেরিয়ে গেলেও রায়গঞ্জের শক্তিনগর এলাকায় সরকারি উদ্যোগে কোনও প্রাথমিক স্কুল তৈরি না হওয়ায় ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ওয়ার্ডে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার পড়ুয়ারা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ে। অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা দিনভর দিনমজুর, পরিচারিকা ও রিকশা চালানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা ছেলেমেয়েদের অন্য ওয়ার্ডের স্কুলগুলিতে নিয়মিত পৌঁছে দিতে ও ছুটির পর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার সময় পান না ফলে এলাকার পড়ুয়াদের পঠনপাঠন বিঘ্নিত হচ্ছে। বাসিন্দাদের আন্দোলনের চাপে পড়ে রাজ্য উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দফতর ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক স্কুল তৈরির জন্য ২০১৪ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি সাত কাঠা জমি দান করে। ওই দিনই জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় দফতর ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক স্কুল তৈরির অনুমোদনও দেয়। বরুণবাবুর উদ্যোগে এর পর বাসিন্দারা চাঁদা তুলে ওই স্কুলে টিন দিয়ে একটি ক্লাসরুম তৈরি করেন। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় দফতরের তরফে এর পর ওই স্কুলে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এর পর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গত বছরের জুলাই মাস থেকে ওই স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয়। বাসিন্দাদের অনুরোধে সেই সময় পড়ুয়াদের বসার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে ১০টি বেঞ্চ দান করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় রায়চৌধুরীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় বসার জায়গার অভাবে ও স্কুলে মিড-ডে মিল চালু না হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরেই ৪০ জনের বেশি পড়ুয়া স্কুলে আসে না। তার উপর সরকারি উদ্যোগে স্কুলে বিদ্যুতের সংযোগ না পৌঁছনোয় গরমের হাত থেকে বাঁচতে গত দু’সপ্তাহ ধরে গড়ে ২০-২৫ জনের বেশি পড়ুয়া স্কুলে হাজির হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের তরফে একাধিক বার সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতরকে জানালেও কোনও লাভ হয়নি।’’
ওই স্কুলের তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির দুই ছাত্রী মনীষা পাসোয়ান ও সোনিয়া পাসোয়ান বলে, ‘‘একটি ক্লাসরুমে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। পাখা না থাকায় কিছু দিন ধরে গরমে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া মিড-ডে মিল না হওয়ায় দুপুরে খিদে পেয়ে যায়। তাই আমাদের মতো অনেকেই প্রতিদিন স্কুলে যায় না।’’
কাউন্সিলর বরুণবাবুর দাবি, রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই প্রশাসনের একাংশ ওই স্কুলে ক্লাসরুম তৈরি, মিড-ডে মিল চালু-সহ সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য আর্থিক বরাদ্দ আটকে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ছ’মাসে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সর্বশিক্ষা মিশন দফতরে বহু বার আবেদন করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই এলাকার পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের স্বার্থে অভিভাবক ও বাসিন্দাদের নিয়ে অরাজনৈতিক আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy