টক্কর ঘরেই। তাই কেউ কমিটিকে বলেছেন, তিন মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না। কেউ বা সন্ধে থেকে রাত মিলিয়ে ছুটবেন প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। তবু ‘প্রথম’ হওয়া চাই! পুজো-উদ্বোধনে যেন এমন অলিখিত যুদ্ধেই নেমেছেন শাসক-দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
দক্ষিণবঙ্গে পুজো উদ্বোধনে তারকাদের ডাক পড়ে। কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রধান তারকা। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে ভরসা রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরাই। সরকারি আমলারাও পুজোর উদ্বোধনে ডাক পান বটে, তবে মূল টানাটানি জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই। এ বারে সেই তালিকা জুড়ে শুধু তৃণমূল নেতা-নেত্রীদেরই নাম। দলেই গুঞ্জন, দিনের শেষে পুজোর উদ্বোধনের সংখ্যা হিসেব কষে দেখছেন তৃণমূল নেতানেত্রীরাও। কে কটা পুজো উদ্বোধনে ডাক পেলেন তা নাকি লোকসভা ভোটের আগে বাড়তি গুরুত্ব দিতে পারে অন্য শিবিরের নেতাদের।
কোচবিহার শহরের একটি বড়মাপের পুজোর উদ্যোক্তা শোনালেন এক ঘটনা। পুজো উদ্বোধনের জন্য এক পরিচিত জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। উদ্যোক্তাদের মুখে সেই নেতা শোনেন উদ্বোধনের মঞ্চে থাকবেন তার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাও। শুনেই সেই নেতার মন্তব্য, “তোরা তো ১-১ করে দিলি। ওকে না ডাকলে আমি তো এক গোলে এগিয়ে থাকতাম।’’ আলিপুরদুয়ারের এক নেতা এখন জেলার বাইরে রয়েছেন। তাঁর এক সঙ্গীর মন্তব্য, “পঞ্চমীর আগে দাদা চলে আসবেন। কমিটিগুলি দাদাকে চাইছে। তাই আসতেই হবে।”
মালবাজার মহকুমায় পুজো উদ্বোধনের দৌড়ে সকলকে ছাপিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূল নেতা স্বপন সাহা। মোট ১৩টি পুজোর উদ্বোধন করবেন তিনি। ক্লাব সংগঠনগুলি থেকে বারবার আমন্ত্রণ আসায় পঞ্চমী আর ষষ্ঠীতে উদ্বোধন নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন স্বপনবাবু। মালবাজারের বাইরে চালসা এবং মেটেলিতেও পুজো উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা স্বপনবাবুর। তবে উদ্বোধনে রাজনীতির কোনও বিষয় নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
জলপাইগুড়ির এক নেতা প্রতিটি কমিটিকে জানিয়ে দিয়েছে পাঁচ মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না। তা শুনে এক কমিটির উদ্যোক্তা অনুরোধ করেছিলেন, “দাদা! অন্তত আধঘণ্টা থাকলে হয় না!” রাজি হননি সেই নেতা। জানিয়ে দিয়েছেন, যে ভাবেই হোক তাকে সব মণ্ডপে পৌঁছতেই হবে। সে কারণেই কেউ সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত দশটা চার ঘণ্টায় ২০টিরও বেশি কমিটিকে কথা দিয়েছেন। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৫টি মণ্ডপ।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য পুজো উদ্বোধনের তালিকায় তেমন নেই। আলিপুরদুয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “মায়ের পুজো উদ্বোধন শুধু চমক। আমি তাতে বিশ্বাস করি না।’’ বিজেপির কটাক্ষ, সরকারি অনুদান হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও অনেক পুজো কমিটি গেরুয়া শিবিরের জনপ্রতিনিধিদের ডাক দেন না। বিজেপির আলিপুদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘কোনও পুজো কমিটি সরাসরি ডাকতে সাহস পাচ্ছে না। তবে অনেক কমিটি যোগাযোগ রাখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy