Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মদ মানায় জের-বার

রবিবার সকাল ১১টা। পর্যটক বোঝাই একটি গাড়ি এসে দাঁড়াল শিলিগুড়ির তিনবাতি এলাকায়। রাস্তার মোড়ে মদের দোকানটিতে তালা। সাদা কাগজ সেঁটে ঢেকে দেওয়া হয়েছে দোকানের ওপরে থাকা হোর্ডিং।

ভোলবদল: মুছে দেওয়া হচ্ছে ‘বার’ শব্দটি। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে। ছবি: সন্দীপ পাল

ভোলবদল: মুছে দেওয়া হচ্ছে ‘বার’ শব্দটি। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

রবিবার সকাল ১১টা। পর্যটক বোঝাই একটি গাড়ি এসে দাঁড়াল শিলিগুড়ির তিনবাতি এলাকায়। রাস্তার মোড়ে মদের দোকানটিতে তালা। সাদা কাগজ সেঁটে ঢেকে দেওয়া হয়েছে দোকানের ওপরে থাকা হোর্ডিং। গাড়ির চালক নেমে আশপাশের ব্যবসায়ীদের কাছে জিগ্গেস করতে শুরু করলেন। এক অবাঙালি রুটি বিক্রেতা জানালেন, ‘‘আজ সে দুকান বন্‌ধ।’’

রবিবার নয়, শনিবার থেকেই দোকানটি বন্ধ। রাজ্যের আবগারি দফতর থেকে কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি। তবে মৌখিক ভাবে দোকানের মালিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জাতীয় সড়কের ধারে আর মদের দোকান চালানো যাবে না।

এমন বার্তা জেলার সর্বত্র পৌঁছেছে কি না, তাই নিয়ে প্রশাসনিক মহলেই সংশয় রয়েছে। তবে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরে সরকারের আলাদা করে কিছু বলার দরকার নেই। কেউ যদি দোকান খুলে রাখেন, তাঁকে আদালত অবমাননার দায়েও পড়তে হতে পারে। তখন আদালতের নির্দেশেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

প্রশাসনের মধ্যে অবশ্য এখন সব থেকে বড় চিন্তা, রাজস্বের যে বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা সামাল দেওয়া যাবে কী ভাবে? কারণ, দোকান তো শুধু শিলিগুড়িতেই বন্ধ হয়নি। গোটা দার্জিলিং জেলায় মোট ১৭০টি দোকান শনিবার থেকে আর ঝাঁপ খুলছে না। এর মধ্যে কালিম্পং ও দার্জিলিঙের অধিকাংশ দোকানও রয়েছে। ৫০টিরও বেশি দোকান সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহরের এই হাল আবগারি দফতরের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে।

দার্জিলিং জেলার মধ্য দিয়ে তিনটি জাতীয় সড়ক গিয়েছে। রাজ্য সড়ক রয়েছে ৫টি। ঘোষপুকুর থেকে দার্জিলিং যাওয়ার ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে ২৫টির বেশি দোকান ছিল। সব এখন বন্ধ। ৩১ এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেও পানশালা রয়েছে। পাহাড়ে ঘুম, পেশক রোড, আপার ঋষি রোড রাজ্য সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। সমতলের মাটিগাড়া থেকে কার্শিয়াং যাওয়ার রাজ্য সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে পঞ্চাশটি মদের দোকানও পড়ছে নিষেধাজ্ঞার আওতায়। তবে এখনও নির্দেশ না পাওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন অভিযান নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। কোনও দোকানের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়নি।

তবে এই অবস্থায় বার নিয়ে কার্যত জেরবার বহু ব্যবসায়ী। উত্তরবঙ্গে বহু বড় হোটেল ও বারের অবস্থানই জাতীয় সড়কের ধারে। কারণ তাতে ব্যবসাও হয় বেশি। তাই এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় এবং রাজ্য সড়কের ধার থেকে দোকান সরাতে গেলে জমি কোথায় পাবেন, বা আদৌ পাবেন কি না— এই নিয়ে চিন্তায় মদ ব্যবসায়ীরাও। জলপাইগুড়িতে একটি হোটেল কাম বার-এ ‘বার’ লেখাটি মুছে দিেত দেখা গিয়েছে। তাঁদের সংগঠনের তরফে গৌতম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আইন মেনেই পদক্ষেপ হবে। কী করণীয়, তা নিয়েই আলোচনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquor stores National Highways Closed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE