Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোথায় বাবা, ডেকেই গেল মিষ্টি

ছোট্ট পূর্ণাক্ষীর এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা তাকে ভালবেসে ‘মিষ্টি’ বলে ডাকতেন। বাড়িতে তখন কান্নার রোল। ‘মিষ্টি’ও কাঁদতে শুরু করে। আর ডাকতে শুরু করে ‘বাবা-বাবা তুমি কখন আসবে। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”

শোকস্তব্ধ: অনির্বাণবাবুর মেয়ে পূর্ণাক্ষী ও স্ত্রী নূপুরদেবী। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

শোকস্তব্ধ: অনির্বাণবাবুর মেয়ে পূর্ণাক্ষী ও স্ত্রী নূপুরদেবী। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১৩
Share: Save:

কখন আসবে বাবা?

ছোট্ট পূর্ণাক্ষীর এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা তাকে ভালবেসে ‘মিষ্টি’ বলে ডাকতেন। বাড়িতে তখন কান্নার রোল। ‘মিষ্টি’ও কাঁদতে শুরু করে। আর ডাকতে শুরু করে ‘বাবা-বাবা তুমি কখন আসবে। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।” দুপুর গড়িয়ে বাবা ফিরল বাড়িতে ঠিকই। কিন্তু, পূর্ণাক্ষীকে আর ‘মিষ্টি’ বলে ডাকলেন না তিনি। শুয়ে রইলেন নিথর হয়ে। বুধবার রাতে বাজি পোড়াতে গিয়ে জখম হয়ে পড়েন ওই ছোট্ট শিশুর বাবা অনির্বাণ ঘোষ। রাত ১০টা নাগাদ নার্সিংহোমের বিছানায় তাঁর মৃত্যু হয়। সেই খবর বাড়িতে পৌঁছতেই সবাই ভেঙে পড়েন। তাঁর স্ত্রী নূপুরদেবী ঘন ঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। পুত্রশোকে মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মহুয়াদেবীও।

কোচবিহার শহর থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে বিবেকানন্দ স্ট্রিট লাগোয়া গুড়িয়াহাটির মদনমোহন কলোনিতে অনির্বাণবাবুর বাড়ি। মা-স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশীরা ভিড় করতে শুরু করে ওই বাড়িতে।

অনির্বাণবাবুর শ্বশুর উজ্জ্বল সেন, শাশুড়ি অনিতাদেবী রাতেই ওই বাড়িতে পৌঁছন। তাঁরা জানান, বছর দশেক আগে অনির্বাণ-নূপুরের বিয়ে হয়। তাঁদের কন্যা মিষ্টি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। অনির্বাণের বাবা মঙ্গল ঘোষ দীর্ঘদিন আগে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত বছর ডিসেম্বর মাসে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বাইপাস সার্জারি করেন অনির্বাণবাবু। তারপর থেকে তিনি অবশ্য সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন।

বুধবার বাজি ফাটাতে গিয়েই জখম হয়ে পড়েন তিনি। রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী নূপুরদেবী কান্নার মধ্যেই বার বার বলছিলেন, “এখন কী করে বেঁচে থাকব। কেন এমন হল? কী অপরাধ করেছি।” অনির্বাণবাবুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “ছেলে ছাড়া বেঁচে থাকব কিভাবে। অনির্বাণ কেন এমন ভাবে চলে গেল। তুই ফিরে আয় বাবা।”

অনির্বাণের শ্বশুর, শাশুড়ি অনবরত কাঁদছিলেন। তাঁর শাশুড়ি অনিতাদেবী বলেন, “অনির্বাণ আমার শুধু জামাই নয়, ছেলে ছিল। কী ভাল মানুষ ছিল। কিছু খেতে দিলে আগে আমাকে খাওয়াতো। এমন মানুষ চলে গেলে থাকব কী করে?” ওই এলাকার বাসিন্দা প্রতিবেশী যুবক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “খুব ভাল মানুষ ছিলেন অনির্বাণ। সবার সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। মানুষকে খুব সম্মান করতেন। ওই দিন সুস্থ ভাবেই দোকানে যান। সন্ধে পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন। তার পরে এমন হবে ভাবতে পারেনি কেউ।”

ছোট্ট মিষ্টিকে কেউ বলে উঠতে পারছে না, কেন তার বাবা আর ফিরবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Mourn Cracker Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE