ব্যস্ত: ধূপকাঠি তৈরি করছে প্রণব ও পবিত্র। নিজস্ব চিত্র
করোনা-আবহে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ স্কুল, টিউশন। টান পড়েছে পরিচারিকা মা, ভ্যানচালক বা ফুচকা বিক্রেতা বাবার রোজগারে। পড়াশোনার ফাঁকে অনটনের সংসারে হাল ফেরাতে তাই ধূপকাঠি তৈরি করছে পুরাতন মালদহের পায়েল, পবিত্র, প্রণবদের মতো এক দল স্কুলপড়ুয়া। বাড়িতে স্মার্টফোন না থাকায় স্কুলের অনলাইন ক্লাসেও তারা যোগ দিতে পারছে না। যদিও সাধারণ পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড ডে মিলের সঙ্গে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা দফতর।
পুরাতন মালদহ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপল্লি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা দিনমজুরি। করোনার জেরে লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বাড়ির রোজগেরে সদস্যরা। আনলক পর্বেও পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি। তাই সংসারের হাল ফেরাতে ধূপকাঠি তৈরি করছে এলাকার কয়েক জন পড়ুয়া। সেখানে একটি ধূপকাঠি তৈরির কারখানা রয়েছে। ওই কারখানায় ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া পবিত্রকে নিয়ে ধূপকাঠি তৈরি করছে তার দাদা, দশম শ্রেণির প্রণব পাল। দু’জনেই পুরাতন মালদহের কালাচাঁদ হাইস্কুলের পড়ুয়া। তাদের বাবা প্রফুল্ল ভ্যানচালক। মা সবিতা পরিচারিকার কাজ করেন। সবিতা বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের কাজই প্রায় বন্ধ। এমন অবস্থায় দুই ছেলেই সংসার চালাচ্ছ।’’
প্রণব জানায়, কাজ তো করতেই হবে। আর স্কুল থেকে স্মার্টফোনে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। তাদের স্মার্টফোন নেই। তাই স্কুল থেকে দেওয়া প্রশ্নপত্রে পড়াশোনা করার পাশাপাশি কাজ করছে ওরা।
প্রণব, পবিত্রদের মতোই ধূপকাঠি তৈরিতে ব্যস্ত স্থানীয় আরও সাত কিশোর-কিশোরী। তাদের কারও বাবা ফুচকা বিক্রি করেন, কারও বাবা সাফাইকর্মী। বাচামারি জি কে হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া পায়েল সরকার জানায়, বাবা-মা এখন সেভাবে কাজ পাচ্ছেন না। তার কথায়, ‘‘কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। তাই কাজ করছি।’’ আর পড়াশোনা? তার উত্তর, ‘‘স্কুল থেকে মিড ডে মিলের সঙ্গে প্রশ্নপত্র দিয়েছে। কিন্তু সব প্রশ্ন তো বুঝতে পারছি না। আর স্মার্টফোনও নেই।’’
মালদহের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) উদয়ন ভৌমিক বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে তা দেখা হচ্ছে।’’ পুরাতন মালদহের পুরপ্রশাসক কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘করোনা-আবহে অসহায় মানুষদের পাশে পুরসভা ছিল, থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy