Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দুই সেনাপতির দেরি, তৃণমূলের অন্দরে অব্যাহত তর্ক

নির্বাচনের দিন দলের সেনাপতিকে এত দেরি করে নামতে দেখে অবাক তৃণমূলের কর্মীরাই। জল্পনাও ছড়ায়।

অমলবাবুর দেরি করে বেরোনো আর বিপ্লববাবুর দেরি করে ময়দানে নামা এক নয়। ছবি: এএফপি।

অমলবাবুর দেরি করে বেরোনো আর বিপ্লববাবুর দেরি করে ময়দানে নামা এক নয়। ছবি: এএফপি।

নীহার বিশ্বাস ও গৌর আচার্য
গঙ্গারামপুর ও ইটাহার শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০২
Share: Save:

তৃণমূলের প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ সকাল থেকেই ছুটছেন। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে তাঁর দলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র ভোটের দিন ময়দানে নামলেন যখন বেলা তখন ১১টা। এর মধ্যে বালুরঘাট কেন্দ্রে ২৫ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। তত ক্ষণ পর্যন্ত তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল। বিপ্লবের বক্তব্য, ‘‘সোমবার অনেক রাত পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছি। তাই এ দিন উঠতে দেরি হয়েছে।’’

নির্বাচনের দিন দলের সেনাপতিকে এত দেরি করে নামতে দেখে অবাক তৃণমূলের কর্মীরাই। জল্পনাও ছড়ায়। দলের জেলা নেতাদের কেউ কেউ এ দিন একান্তে বলছেন, ‘‘বিপ্লববাবু গোটা ভোট প্রচারই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। তাঁকে অন্য বার যতটা উজ্জীবিত হয়ে প্রচারে নামতে দেখা যায়, এ বার নির্বাচনের গোটা সময়ে একবারও সেই ভাবে দেখা যায়নি।’’ বিপ্লববাবুর অনুগামীদের পাল্টা দাবি, ভিত্তিহীন অপপ্রচার করা হচ্ছে। তাঁরা জানান, বিপ্লববাবু গোটা ভোট প্রচারই সুন্দর ভাবে পরিচালনা করেছেন, তার পরে শেষ মুহূর্তের কৌশলও তৈরি করে তবে সোমবার রাত দু’টো নাগাদ শুতে গিয়েছিলেন। তবে বিতর্ক তাতে থামছে না। তৃণমূলের কিছু নেতারই বক্তব্য, ‘‘প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে বিপ্লববাবুর প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল, তা সকলেরই জানা। তাঁর ক্ষোভ মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।’’

বিপ্লব এ দিন বেরিয়ে প্রথমেই যান বাড়ির কাছে দুর্গাবাড়ি বুথে। সেখানে ভোট দিয়ে হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে যান। এরপর ওই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ঘুরে দলের নেতা কর্মীদের ভোট করানোর বিভিন্ন পরামর্শ ও নির্দেশ দেন তিনি। কোথায় কোথায় কারা এজেন্ট রয়েছেন, সে খবরও নিয়েছেন। বিপ্লব বলেন, ‘‘দক্ষিণ দিনাজপুরে বিরোধীদের কোনও সংগঠন নেই। ময়দানে শুধু তৃণমূল রয়েছে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই। তৃণমূল জিতছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যও স্নান খাওয়া করে বাড়ি থেকে বেরোন বেলা ১১টা নাগাদ। তবে সকাল থেকেই ফোনে তিনি দলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

অমল প্রথমেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক কিলোমিটার দূরে পতিরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বুথে গিয়ে ভোট দেন। সেখানেই তৃণমূলের কর্মীরা তাঁর কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ জানান। অমল তা নিয়ে প্রতিবাদ জানান। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বচসাও বেঁধে যায়।

এর পর অমল সন্ধ্যা পর্যন্ত পতিরাজপুর, ইটাহার, দুর্লভপুর, দুর্গাপুর, মারনাই, ছয়ঘরা ও জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথের সামনে ঘুরেছেন। ভোটারদের গিয়ে নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছেন। গোটা এলাকাই তিনি ঘুরেছেন। কিন্তু সকালে এত দেরি করে বাড়ি থেকে বেরোলেন কেন? অমলের কথায়, ‘‘ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ বাসিন্দা উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের পাশে রয়েছেন। তাই নির্বাচনের দিন আমার কাছে আলাদা কিছু নয়।’’

ভোট মেটার পরেও তৃণমূলের অন্দরে দুই সেনাপতির দেরি করে বেরোনো নিয়ে তর্ক অব্যাহত। কেউ কেউ বলছেন, বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা এলাকা রয়েছে, তার ছ’টিই দক্ষিণ দিনাজপুরের অন্তর্গত। অর্থাৎ এই লোকসভা কেন্দ্রের মূল দায়িত্বই দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর। অমলবাবুর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কেবল একটি বিধানসভা কেন্দ্র, যে কেন্দ্রের আবার বিধায়ক তিনি নিজেই। তাই অমলবাবুর দেরি করে বেরোনো আর বিপ্লববাবুর দেরি করে ময়দানে নামা এক নয়।

বিপ্লববাবুর অনুগামীদের অবশ্য সোজা কথা, ‘‘ভোটে জেলা সভাপতির নেতৃত্বে তৃণমূলই জিতছে। তাই দেরি করে বেরোনো আর সকাল সকাল বেরোনোর মধ্যে ফারাক নেই।’’

দুই সেনাপতিকেই দিনভর ফুরফুরে মেজাজে দেখা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE