Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিট্টুকে নিয়ে তপ্ত বিতর্ক বিজেপিতেই

অভিযোগ উঠেছে, এর পিছনে রয়েছে ‘পেশি শক্তি’ ও ‘অর্থ’র জোর।

প্রার্থনা: মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে যাচ্ছেন নিশীথ প্রামাণিক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

প্রার্থনা: মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে যাচ্ছেন নিশীথ প্রামাণিক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০৬:১১
Share: Save:

তৃণমূলের ‘যুব নেতা’ হিসেবে কোচবিহারে লাইমলাইটে আসে নিশীথ প্রামাণিক। জেলা রাজনীতিতে তাঁকে ‘বিট্টু’ নামেই সবাই চেনে। আড়াই মাস আগে দল তাঁকে বহিষ্কার করে। এর পরেই দিল্লিতে গিয়ে লোকসভা ভোটের আগে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান। তাঁকেই লোকসভায় কোচবিহার আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তাঁর ওই উত্থান নিয়ে চর্চা রয়েছে গোটা জেলায়।

অভিযোগ উঠেছে, এর পিছনে রয়েছে ‘পেশি শক্তি’ ও ‘অর্থ’র জোর। কিন্তু কী করে তৈরি হল তাঁর ‘পেশি শক্তি’? টাকার উৎসই বা কোথায়, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। নিশীথ বলেন, “এই সব বিতর্ক একদমই ঠিক নয়। আমি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। মানুষের বিপদে–পদে পাশে দাঁড়াই। তাঁরাই আমার শক্তি। আর আমার যত টুকু আয়, তা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা থেকেই। কেউ যদি তা নিয়ে গল্প তৈরি করে, তা নিয়ে কিছু বলার নেই।”

তিরিশের কোটায় পা রাখা ওই যুবকের বাড়ি দিনহাটার ভেটাগুড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁর বাবা এবং মা এক সময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাম আমলে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল নিশীথের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তাঁকে ওই দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা যেতে শুরু করে। তৃণমূলের উপপ্রধানের দায়িত্বে থাকা নিশীথের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় ‘তৃণমূল যুবা’ সংগঠনে তাঁর নাম শোনা যায়। পরে দলীয় কোন্দলে তাঁর বাড়িও ভাঙচুর হয়। ভেটাগুড়ি ছেড়ে কোচবিহারে যুব তৃণমূলের সভাপতি রানা বসুর আশ্রয়ে থাকাতে শুরু করেন। অসুস্থ হয়ে রানাবাবুর মৃত্যুর পরে যুব তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে চলে যায় তাঁর নাম। ফের ভেটাগুড়ি ফিরে সংগঠন তৈরির কাজে নামেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যে দিনহাটায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তৃণমূলের যুব সংগঠনের নেতা পার্থপ্রতিম রায়, অভিজিৎ দে ভৌমিকদের সঙ্গে তাঁর নামও শোনা যেত। কিছু দিন আগে এক কোটি টাকা খরচ করে ভেটাগুড়ির মতো জায়গায় গণেশ পুজো করে সাড়া ফেলে দেন ওই যুব নেতা।

তৃণমূলের অভিযোগ, অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন নিশীথ। ডাকাতি-ছিনতাই থেকে শুরু করে নানা অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

রাজনীতিতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করে মূল নেতাদের তিনি অনেকটাই কোণঠাসা করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে টক্কর দিয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন। তার একটি বড় অংশ পঞ্চায়েত ভোটে জয়লাভ করে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করা হয় নিশীথকে। তার পর থেকেই তিনি বাইরে ছিলেন। তিনি কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজেপিতে যোগ দেন নিশীথ। শুক্রবার আধা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে তিনি কোচবিহার ফেরেন।

কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নিশীথকে কটাক্ষ করে বলেন, “আমাদের দল থেকে বহিস্কৃত কাউকে নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি তাঁর বিরুদ্ধে নানা অসামাজিক কাজকর্মের মামলা রয়েছে। তা নির্বাচন কমিশন দেখবে।” নিশীথ রবীন্দ্রনাথকে পচা ডাস্টবিন বলে কটাক্ষ করে পাল্টা বলেন, “অপপ্রচারের জবাব মানুষ দেবে। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE