Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

পাহাড়ে সবাই খুশি

বৃহস্পতিবার পাহাড়ের ভোটে বহু বুথেই ছিল না কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে তাতে নিরাপত্তা নিয়ে সেভাবে বড় কোনও প্রশ্ন তোলেনি শাসক থেকে বিরোধী কোনও দল।

অপেক্ষায়: দার্জিলিঙের দিলারামে একটি বুথে ভোটারদের লাইন। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

অপেক্ষায়: দার্জিলিঙের দিলারামে একটি বুথে ভোটারদের লাইন। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২৬
Share: Save:

২৪/২১১, কার্শিয়াংয়ের ক্যাসলটন চা বাগানের স্প্রিং সাইড বুথ। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০ টা। লাইনে দাড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক ভোটার। বুথ থেকে কিছুটা দূরে তখন গরম গরম পুরি-তরকারি হচ্ছিল। পাত পেরে তা খাচ্ছিলেন ভোটাররা। দুপুরের মেনুও তখন প্রায় তৈরি। কষা মুরগির মাংস, আলু, স্কোয়াশের তরকারি আর পাঁপর ভাজা। আয়োজক কারা ছিল সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে যাঁরা চেটেপুটে খাচ্ছিলেন তাঁদের মধ্যে যেমন বিনয়পন্থী মোর্চার কট্টর সমর্থক ভক্তিমান তামাং ছিলেন তেমনই বিমলপন্থী মোর্চার অন্ধ ভক্ত অঞ্জু লামাকেও দেখা গিয়েছে।

খাওয়ার আয়োজন করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা নয়তো? এগিয়ে এলেন সুনীল থাপা। বললেন, ‘‘ভোটের দিন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা পাহাড়ের বরাবরের রীতি। প্রভাবিত করার বিষয় নেই।’’ দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বৃহস্পতিবার এ ভাবেই উৎসবের মেজাজে ভোট হল পাহাড়ে।

১০৫ দিনের টানা বন্‌ধ, আতঙ্ক, গন্ডগোল সব ভুলে ভোট দিলেন পাহাড়বাসী। পাহাড়ের সর্বত্রই ভোট মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। এ দিন মেঘের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। কনকনে ঠান্ডাও হঠাৎ করে উধাও হয়েছিল। আর রক্তপাতহীন ভোট করাতে পেরে দিনের শেষে হাসি ফুটেছে পাহাড়ের দায়িত্বে থাকা কমিশনের কর্তাদের মুখে।

এ দিন কালিম্পং, মিরিক বা কার্শিয়াং বাজারের বেশিরভাগ দোকানই ছিল বন্ধ। একই ছবি দেখা গিয়েছে দার্জিলিংয়েও। চকবাজার থেকে ম্যালে, মুদিখানা থেকে খাবার হোটেল বেশিরভাগেরই শাটার নামানো ছিল। এ দিন সকাল থেকেই পাহাড়ের বিভিন্ন বুথে দেখা গিয়েছে ভোটারদের লাইন। নির্বাচন কমিশনের আর্জি মেনে ভোটের জন্য চা শ্রমিকদের সবেতন ছুটি দিয়েছিল মালিকপক্ষ। ফলে চা বাগানগুলোতেও এ দিন ভালভাবে ভোট হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বৃহস্পতিবার পাহাড়ের ভোটে বহু বুথেই ছিল না কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে তাতে নিরাপত্তা নিয়ে সেভাবে বড় কোনও প্রশ্ন তোলেনি শাসক থেকে বিরোধী কোনও দল। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ দার্জিলিং শহরে পৌঁছন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। সেখানে তৃণমূল ও বিনয়পন্থী মোর্চার বিরুদ্ধে কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ের কয়েকটি বুথে তাদের এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বিনয় তামাং অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করেছেন। তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাই ও বাম প্রার্থী সমন পাঠক, দু’জনেরই দাবি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।

বিনয় বলেন, ‘‘আমি খুবই খুশি যে এ বারই প্রথমবার শান্তিতে ভোট হল পাহাড়ে। সমস্ত প্রার্থীদের অভিনন্দন জানাই। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফিরুক এটাই চাই।’’ শান্তিতে ভোট হওয়ার জন্য পাহাড়বাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে অডিয়ো বার্তা দিয়েছেন বিমল গুরুংও। সেই বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘যেভাবে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন তারজন্য সকলকে অভিনন্দন। এই শান্তিই আমি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE