Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

নামেই প্রার্থী নীরজ, লড়াই বিমল-বিনয়েরই

লোকসভা ভোটে সেনাপতি হিসেবে কাজ করেছেন বিনয়। উপনির্বাচনে তিনি নিজেই লড়াইয়ের ময়দানে।

দার্জিলিঙে প্রচারে বিনয় তামাং (বাঁ দিকে) ও নীরজ জিম্বার হয়ে প্রচারে রাজু বিস্তা ও মন ঘিসিং। নিজস্ব চিত্র

দার্জিলিঙে প্রচারে বিনয় তামাং (বাঁ দিকে) ও নীরজ জিম্বার হয়ে প্রচারে রাজু বিস্তা ও মন ঘিসিং। নিজস্ব চিত্র

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৫:৩৯
Share: Save:

কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বরাবরই পাহাড়ের ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেছে দার্জিলিং। সুবাস ঘিসিং থেকে বিমল গুরুং হয়ে পাহাড়ের সরকারি ক্ষমতার রাশ এখন বিনয় তামাংয়ের হাতে। লালকুঠিতে বসেই তিনি পাহাড় পরিচালনা করছেন। তাই ম্যাল থেকে সুকিয়াপোখরি এলাকার নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সব দলের কাছেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে-ই ভোটযুদ্ধে থাকুন, লড়াইটা হচ্ছে মূলত বিমল ও বিনয়পন্থী মোর্চার মধ্যে।

লোকসভা ভোটে সেনাপতি হিসেবে কাজ করেছেন বিনয়। উপনির্বাচনে তিনি নিজেই লড়াইয়ের ময়দানে। বিনয়-ঘনিষ্ঠ এক মোর্চা নেতার মতে, লোকসভা ছিল তাঁর ক্ষমতা প্রমাণের লড়াই আর বিধানসভা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার। তবে ওই লড়াইয়ে তিনি পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন তৃণমূলের। যদিও আইনি জটিলতায় বিনয় ‘নির্দল’ প্রার্থী। বিনয়ের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নীরজ জিম্বা জিএনএলএফের মুখপাত্র হলেও প্রার্থী হয়েছেন পদ্ম প্রতীকে। বিমল গুরুংই তাঁর মূল ভরসা। সঙ্গে আছে জিএনএলএফ। সুবাস ঘিসিংয়ের সমর্থকরা নীরজের প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন। জন আন্দোলন পার্টির (জাপ) প্রার্থী হয়েছেন মদন তামাংয়ের ভাই অমর লামা। হরকা বাহাদুরের নেতৃত্ব পাহাড়ে বিকল্প রাজনীতির প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে জাপ।

নির্দল প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বরাজ থাপা। লোকসভা ভোটের আগেও বিমল শিবিরের অন্যতম নেতা ছিলেন স্বরাজ। একসময় তাকে বিমলের ছায়াসঙ্গী বলা হত। লোকসভার প্রার্থী নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে দল ছাড়েন স্বরাজ। লোকসভায় মনোনয়ন জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করেন। উপনির্বাচনে ফের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তাকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস, সিপিআরএম এবং গোর্খা লিগের প্রতাপ খাতি গোষ্ঠী। সিপিএমের হয়ে লড়ছেন দলের জেলা নেতা কেবি ওয়াতার। তবে সিপিএমের অনেক নেতাই বলছেন, তাঁদের লড়াইটা মূলত প্রতীকী। চা বাগান এলাকায় যেটুকু দলীয় সংগঠন অবশিষ্ট, তা ধরে রাখতেই প্রচার চালাচ্ছে লাল পার্টি। এ ছাড়াও গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের অমর লকসম, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের বিপ্লব রাই, ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান ফ্রন্টের সঞ্জয় ঠাকুরি এবং নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে আছেন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেত্রী সারদা রাই সুব্বা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

লোকসভার মতো জাতীয় রাজনীতির কচকচানি নেই উপনির্বাচনে। নেই আলাদা রাজ্যের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে মত। গোর্খা জাতিসত্তা রক্ষা বা জনজাতিগুলিকে উপজাতির মর্যাদা প্রদানের দাবিও সে ভাবে তুলছেন না কেউ। স্থানীয় সমস্যা সামনে রেখেই প্রচার হচ্ছে। সমধানের আশ্বাস দিচ্ছেন সব প্রার্থীই। মিরিক মডেলে জমির পাট্টা প্রদানকেই মূল হাতিয়ার করেছে বিনয় শিবির। শুরু থেকেই বিনয়রা পাট্টা নিয়ে সরব হওয়ায় বিজেপি জোটও পাট্টাকে হাতিয়ার করে সভা তাতাচ্ছে। দার্জিলিং বিধানসভা এলাকার বেশিরভাগ এলাকাই চা বাগান অধ্যুষিত। তাই বাগান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিও উঠেছে। পাহাড়ের পানীয় জল, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, রাস্তা তৈরির মতো বিষয়কে সামনে রেখেও প্রচার চলছে।

রাজ্যের সহযোগিতায় পাহাড়ের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করে জিটিএ। বর্তমানে জিটিএতে ক্ষমতায় আছে বিনিয় শিবির। রাজ্যের সরকারি দল তাদের সঙ্গে। ফলে স্থানীয় সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতির গ্রহণযোগ্যতায় তাঁরা অনেকটাই সুবিধা পাবেন বলেই মনে করছেন জিটিএর চেয়ারম্যান অনীত থাপা। বিমলের আত্মগোপনের পর থেকে তাঁরা যে সে ভাবে সংগঠন গোছাতে পারেননি, তা ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন বিমলপন্থী মোর্চার অনেক নেতাই। বিমল আবেগই তাঁদের পুঁজি। অন্য দিকে, ২০১৭-এর গন্ডগোলের পর গত দু’বছরে বুথ স্তর থেকে নতুন সংগঠন তৈরি করেছে বিনয় শিবির। উপনির্বাচনে যা তাদের এগিয়ে রাখবে বলেই আশাবাদী শিবিরের নেতারা। যদিও বিমলপন্থী মোর্চার মুখপাত্র বিপি বজগাইয়ের যুক্তি, গন্ডগোলের পর ভয়ে অনেকেই বিনয় শিবিরে নাম লিখিয়েছিল বা ঘরে বসেছিল। এখন তাঁরা প্রকাশ্যে এসে তাঁদের পক্ষে দাড়িয়েছে। তাই ভোটে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। যা তাঁদের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE