Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ঝগড়া মেটাতে আসরে খোদ মমতা

কালীঘাটের ভর্ৎসনায় মিটবে দ্বন্দ্ব?

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তাতেই শেষ পর্যন্ত বিপ্লব মিত্র-অর্পিতা ঘোষের দ্বন্দ্ব মিটল বলে দাবি করল তৃণমূল।

বিপ্লব মিত্র। নিজস্ব চিত্র

বিপ্লব মিত্র। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৬:২৪
Share: Save:

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তাতেই শেষ পর্যন্ত বিপ্লব মিত্র-অর্পিতা ঘোষের দ্বন্দ্ব মিটল বলে দাবি করল তৃণমূল।

বুধবার বিকেলে কলকাতার কালীঘাটে তৃণমূলের প্রার্থী ও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বালুরঘাট কেন্দ্রের প্রসঙ্গ ওঠে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুকে ভর্ৎসনার সুরেই বলে দেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে মুখ খুললে ফল ভাল হবে না। শুধু তাই নয়, দলের ঐক্যবদ্ধ রূপটিই তুলে ধরতে হবে বলে দলের মহাসচিব বিপ্লববাবুকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর।

তারপরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, ‘‘দু’এক জনের প্রার্থী হওয়ার লোভ ছিল। তা হবে না।’’ প্রার্থী হতে না পেরে কেউ দলত্যাগ করতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে কি না, জিজ্ঞাসা করলে দলনেত্রী বলে দেন, ‘‘গেলে আমি বেঁচে যাই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রধানত বিপ্লববাবুকে উদ্দেশ করেই দলনেত্রী এই কথা বলেছেন। তার কারণ, প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই বিপ্লববাবুর অনুগামীরা তাঁকেই বালুরঘাটের প্রার্থী করা হচ্ছে ধরে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই কেন্দ্রে গতবারের বিজয়ী অর্পিতা ঘোষকেই ফের প্রার্থী করার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লববাবুর অনুগামীরা একাধিক মন্তব্য করতে শুরু করেন। খোদ বিপ্লববাবু বুধবার সকালে মন্তব্য করেন, বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতার বিরুদ্ধে দলে বিতর্ক ও অসন্তোষ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘সাংসদকে অনেক সময় প্রয়োজনে জেলায় পাওয়া যায় না। দলের জেলা সভাপতি হওয়ায় অনেকে আমার কাছে সেই অভিযোগ করেছেন।’’

বিপ্লববাবুর ভাই প্রশান্ত মিত্র সরাসরি অর্পিতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তাঁকে প্রার্থী হিসেবে কেউ চান না। এখন নেত্রীর বিষয় তিনি কী করবেন,কী করবেন না।’’

সেই সঙ্গেই প্রশান্তবাবুর বক্তব্য ছিল, ‘‘বিজেপি থেকে আমাদের অফার দেওয়া হয়েছে। এখন দিদির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি, তারপরে আমরাও সিদ্ধান্ত নেব।’’ বৈঠকে যাবার আগে বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘সাংসদের প্রতি সকলের ক্ষোভ রয়েছে। আমরা সেটাই নেত্রীকে জানিয়েছিলাম। এই কেন্দ্রে জিততে হলে নতুন কাউকে প্রার্থী করার দাবিও করেছি। এই বিষয়গুলি বলব।’’ তিনি নিজে প্রার্থী হতে চান কি না, সে প্রশ্ন করা হলে বিপ্লবের সাবধানী বক্তব্য ছিল, ‘‘প্রার্থী বাইরের জেলারও কেউ হতে পারেন। কিন্তু অর্পিতা প্রার্থী হলে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও তাঁকে জেতানো সম্ভব নয়।’’

এরপরেই বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে জানিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। তারপরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘যত ক্ষণ দলের জেলা সভাপতি রয়েছি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এক সঙ্গে লড়াই করতে হবে।’’ সেই মন্তব্য শোনার পরেই তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বিরোধ মিটেছে।

অর্পিতাও একই কথা বলেন। অর্পিতার দাবি, বিপ্লবের সঙ্গে তাঁর কোনও দ্বন্দ্বই নেই। তিনি বলেন, ‘‘দলনেত্রী বলেছেন, জিততে হবে। বিপ্লবদার সঙ্গে বসে আমরা প্রচার কৌশল ঠিক করব।’’

কিন্তু জেলা স্তরে এখনও অনেক তৃণমূল নেতার দাবি, এত সহজে এই বিরোধ মেটার নয়। দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়।

গত বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে নিজেদের দখলে থাকা জেলার পাঁচটি বিধানসভা আসনের মধ্যে তিনটি বিধানসভা আসনই হাত ছাড়া হয়। পরাজিত হন খোদ বিপ্লববাবু নিজে এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। সেই দ্বন্দ্বের প্রভাব তৃণমূল কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে,সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE