Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাঠ যেন কথা বলে লোকেশ দাজুর সঙ্গে

কালিম্পং শহরেই থাকেন লোকেশ। পাহাড়ে অগ্রজ ও সম্মানীয়দের ‘দাজু’ বলা হয়। তাই অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের কাছে ‘লোকেন দাজু’ হলে কাঠ-পাগল মানুষ। প্রবীণ নাগরিকদের কাছে অবশ্য ‘লোকেন ভাই’ জিনিয়াস।

নিজের তৈরি কাঠের জিনিসের সঙ্গে লোকেশ। নিজস্ব চিত্র

নিজের তৈরি কাঠের জিনিসের সঙ্গে লোকেশ। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
কালিম্পং শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৯
Share: Save:

পেশায় কাঠমিস্ত্রি নন। কিন্তু, কাঠ যেন কথা বলে ‘লোকেশ দাজু’র সঙ্গে। কালিম্পং শহরের বাসিন্দারা অনেকের ধারণা এমনই। কারণ, সরকারি চাকরির ফাঁকে স্রেফ শখের বশে কাঠ দিয়ে অন্তত ৩ হাজার শিল্পসামগ্রী বানিয়ে ফেলেছেন মধ্য চল্লিশের লোকেশ প্রধান। কাঠের হাতি-ঘোড়া-সিংহ-ময়ূর-পায়রা বানিয়েছেন অনেক। কাঠ দিয়েই শাঁখ তৈরি করেছেন। সেই শাঁখ বাজিয়ে তাকও লাগিয়ে দেন তিনি। তাঁর তৈরি কাঠের খুকুরি নিয়ে ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়িও কম নেই।

কিন্তু, একটা কিছু বিক্রি করেন না তিনি। করবেনও না। লোকেশ বলেন, ‘‘আমি কোথাও কাজ শিখিনি। কাঠের সঙ্গে আমার প্রেম হয়ে গিয়েছে। প্রেমের ফল কী বিক্রি করা যায়!’’ তিনি জানান, কাউকে ভাল লাগলে উপহার দিলেও কখনও সামগ্রী বিক্রি করবেন না। ফলে, ঘরে ডাঁই হয়ে থাকা কাঠের তৈরি কয়েক হাজার সামগ্রী নষ্ট হতে বসেছে।

সম্প্রতি তিস্তা রঙ্গিত উৎসবে তাঁর স্টলে হাজির হয়েছিলেন কালিম্পঙের জেলাশাসক ডক্টর বিশ্বনাথ ও পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব। দুজনেই লোকেশের তৈরি সরঞ্জাম দেখে অভিভূত। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভার এক কর্মী শখে এত সুন্দর কাঠের জিনিসপত্র তৈরি করেন তা জানতাম না। যে হেতু উনি তৈরি সামগ্রী বিক্রি করেন না তাই তা রাখার জন্য মিউজিয়মের ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখব।’’ পুলিশ সুপারও লোকেশকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। যা শোনার পরে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন লোকেশ।

কালিম্পং শহরেই থাকেন লোকেশ। পাহাড়ে অগ্রজ ও সম্মানীয়দের ‘দাজু’ বলা হয়। তাই অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের কাছে ‘লোকেন দাজু’ হলে কাঠ-পাগল মানুষ। প্রবীণ নাগরিকদের কাছে অবশ্য ‘লোকেন ভাই’ জিনিয়াস। পেশায় কালিম্পং পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের কর্মী লোকেশ ছোট থেকেই কাঠের টুকরো ফেলে তা দিয়ে কিছুটা একটা তৈরির চেষ্টা করতেন। ছুরি দিয়ে কেটে কখনও পেন, খুকুরি, দোতরা, সারিন্দা বানানোর চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে পড়েন। এখনও কথা বলতে বলতে কাঠ ঘষে ‘ফুটবল বিশ্বকাপ’ তৈরি করে দিতে পারেন। মাথায় যে টুপি পরেন তাতেও কাঠের নানা কারুকাজ রয়েছে। ক’দিন আগে বলতেন, ‘‘একদিন সব ম্যাটাডরে চাপিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে কোথাও চলে যাব।’’ ডিএম তাঁকে দেখা করতে অনুরোধ করায় হাসি ফিরেছে তাঁর মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalimpong Lokesh Pradhan wooden craft artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE