Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লোকসভার প্রার্থীপদ নিয়ে জলঘোলা শুরু

জনসংযোগে সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। —ফাইল ছবি

জনসংযোগে সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। —ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:১৩
Share: Save:

লোকসভার ভোট আসছে। মাস কয়েকের অন্তর মাত্র। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ দল যে কোচবিহার আসনে ভাল জায়গায় নেই, সে কথা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। তাই বোধহয় সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বিরোধ মেটাতে জেলার ‘নেতা-মন্ত্রী’দের বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। তাতে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টাবে কিনা তা সময় বলবে। কিন্তু পার্থবাবুর বিরুদ্ধে এর মধ্যেই জেলার শীর্ষ নেতাদের দু’-একজন, রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছেন। তাঁদের সাফ কথা, এবারে পার্থবাবু এই আসনে প্রার্থী হলে প্রচারে থাকবেন না তাঁরা। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই, সরগরম কোচবিহারে শাসক দলের অন্দরমহল। সেই সুযোগে বিক্ষুব্ধ নেতাদের গেঁথে তুলতে ছিপ ফেলতে শুরু করেছে বিজেপি। অবশ্য কেউই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “দল লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। যে কোনও মুহূর্তে ভোট হলে আমরা রেকর্ড ভোটে জিতব। দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতোই সবাই কাজ করবে।” প্রার্থী কি পরিবর্তন হবে? হলে কে হবেন? এই প্রশ্নেও, তিনি তো বটেই জেলার অন্য নেতারাও কেউ কিছু বলতে নারাজ।

সাংসদ তথা দলের কোচবিহার জেলার যুব সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “আমরা সকলেই দলের অনুগত সৈনিক। দল যখন যা নির্দেশ দেবে, তাই করব। কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আমাদের মধ্যে নেই। এ সব বিরোধীদের অপপ্রচার। আর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে প্রত্যেকের বাড়ি আমি আগেও গিয়েছি। এবারেও যাচ্ছি। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।”

এক সময় দলে রবীন্দ্রনাথবাবুর একান্ত অনুগত বলে পার্থবাবু পরিচিত ছিলেন। কিন্তু, বর্তমানে দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে রাজ্যের পাহাড় থেকে সাগরে নানান জনের নানা প্রশ্ন। জেলা রাজনীতির চালচিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে পার্থবাবু, রবীন্দ্রনাথবাবু এখন একই দলের দুই গোষ্ঠীর নেতা। জেলা রাজনীতিতে এখন রবীন্দ্রনাথবাবুর পাশে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, বিধায়ক উদয়ন গুহ, হিতেন বর্মণরা রয়েছেন। আর পার্থবাবুর সঙ্গে এখন সব জায়গায় দেখা যায় বিধায়ক মিহির গোস্বামীকে। দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পার্থবাবু এবং রবীন্দ্রনাথবাবুকে একসঙ্গে বড় একটা দেখা যায় না। এক দলের হলেও বর্ষিয়ান বিধায়ক মিহিরবাবুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও জেলায় চর্চা রয়েছে বিস্তর। শুধু জেলাস্তরেই নয়, মহকুমা থেকে ব্লক এমনকী, অঞ্চল স্তরেও এই দুই নেতার অনুগামীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের খবর। এক পক্ষ, আর এক পক্ষের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে মরিয়া, এমন অভিযোগ গত এক বছরে বারে বারে করেছেন দুই গোষ্ঠীর নেতারা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে লোকসভা নির্বাচনে যে ফল ভাল হবে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জেলা এবং রাজ্য নেতারা।

রবীন্দ্রনাথবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথবাবুর জন্যেই আজ পার্থবাবু সাংসদ। কিন্তু তিনি সাংসদের চেয়ারে বসে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র করেছেন। তাই, পার্থবাবু আবার প্রার্থী হলে, এই আসনে ফল ভাল নাও হতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, নেতারাই প্রচারে না যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন রাজ্যস্তরে। পার্থবাবুর অনুগামীদের দাবি, পার্থবাবুকে দল দায়িত্ব দেওয়ার পরে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সংসদ ভবন থেকে জেলার উন্নয়নে তাঁর ভুমিকায় সাধারণ মানুষ খুশি। কম বয়সে পার্থবাবু এমন নজির তৈরি করায়, দলের একটি অংশ তাঁকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছেন।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খুলেছে বিরোধীরাও। জেলা বিজেপি সভাপতি মালতী রাভা বলেন, ‘‘কে লোকসভায় প্রার্থী হবেন, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা নিয়ে মন্তব্য করব না। কিন্তু ওদের এই দ্বন্দ্ব কোনও দিন মিটবে না। এদের এই দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত। ভোটের সময় তাঁরা জবাব দেবেন।’’ সিপিএমের জেলা সভাপতি অনন্ত রায় বলেন, ‘‘আসলে টাকার বখরা নিয়ে দ্বন্দ্ব। লোক দেখানো মিলমিশের নাটকও হচ্ছে। চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। মানুষ সব জানেন, বোঝেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE