আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ। জুবিলি পার্কে উৎসবের মেজাজে দল বেঁধে নিজস্বী। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোথাও এখনও পুজোর মণ্ডপের কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু জলপাইগুড়িতে মহালয়ার আগের দিন থেকে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন সারা শহরের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ায় পাড়ায় ছিল পিকনিকের আয়োজন। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে যায় শব্দবাজির আস্ফালন। সারা রাত ধরে অবিশ্রান্ত ভাবে বাড়িতে বাড়িতে বাজি পোড়ানো চলে সকাল পর্যন্ত। সকালে বাসিন্দারা জড়ো হন জুবিলিপার্ক সংলগ্ন এলাকায়। ঘুরে বেড়ান তিস্তা নদীর চরের কাশবনে। কেউ কেউ নৌকোয় করে ঘুরে বেড়ান। সব শেষে একগুচ্ছ কাশ নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য জুবিলি পার্কে ঢোকার আগে জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমস্ত যানবাহন আটকে দেয় পুলিশ। তারপর থেকে পায়ে হেঁটে জুবিলি পার্ক। তারপরই তিস্তার চর এবং কাশবন। উৎসব এখানেই।
তখন সকাল ছটা। শহরের জুবিলি পার্ক সংলগ্ন তিস্তা নদীর চরে অগণিত মানুষ। সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত তিস্তা নদী। জল নেই। একটা সরু ধারা মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে। পার্ক সংলগ্ন পারের এক দিকে কাশবন। তাতে বাজি ফাটছে। কেউ রাস্তার পাশে পার্কের গায়ে লাগানো বসার জায়গায় বসে আছেন। কেউ স্পারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। চারিদিকে গিজ গিজ করছে ভিড়। বেশিরভাগই নেমে গেছেন কাশ বনে। কেবল আনন্দ আর আনন্দ।
শহরের তরুণ প্রজন্মের দীপঙ্কর, সুনন্দা, অঙ্কিতা, সৌরভরা সারা রাত পিকনিক করেছে। সকালে চলে এসেছে চরে। তারা বলেন, “এই দিনটার জন্যে সারা বছর বসে থাকি। গতকাল সন্ধে থেকে আমরা উৎসবে মেতে উঠেছি। খাওয়া আর আড্ডা চলছেই।” এমন সময় আকাশে জেগে উঠল রামধনু। তাই দেখে উল্লাস আরও বেড়ে গেল। জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের একদল ছাত্রছাত্রী কৃষ্ণেন্দু, রত্না, বহ্নিশিখা, সায়ন, রুচিতা সৈকতরা তখন প্রত্যেকের হাতে কাশফুল নিয়ে নিজেরা সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, রায়কতপাড়ার বাসিন্দা স্বপ্না সাহা, তাঁর মেয়ে সায়ন্তনী এবং পুষ্পিতাকে নিয়ে এসেছেন। বলেন, “আমি প্রতিবারই এই দিনটাতে এখানে আসি। ভাল লাগে।” এসেছিলেন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সত্য দাসও। শুক্রবার ভোরবেলা বন্ধুর পরিবারের সবাইকে নিয়ে জুবিলি পার্কে এসে তিনি হতবাক। তিনি বলেন, “রাজ্যের বহু জায়গায় পুজোর সময় গিয়েছি। জলপাইগুড়িতে এসে মহালয়ার দিন যে অভিজ্ঞতা হল, তা আর কোথাও পাইনি। কেবল আগমনীর আগমন উপলক্ষে এই ভোরবেলা একটা জায়গায় যে এত লোক জড় হয়ে আনন্দ করবে তা আর কোথাও দেখিনি।”
সংস্কৃতপাড়ার বাসিন্দা মধ্য বয়স্ক ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তার স্ত্রী অনিন্দিতাকে নিয়ে এসেছেন। দুজনের হাতেই একগুচ্ছ কাশফুল। তিনি বলেন, “এখানে এসে কাশফুল নিয়ে ফেরার আনন্দের কারণ আমরা মনে করি আজ থেকে মা দুর্গা ঘরে এসে গেলেন।”
হাকিমপাড়ার রিয়া দে মহালয়ার আগে বাপের বাড়ি আসেন। আসেন। বান্ধবী অহনা এবং স্বরূপার সঙ্গে এসেছেন। রিয়া বলেন, “প্রতি বছর এই উন্মাদনা উপভোগ করতে আসি। দারুণ লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy