জেলা ঘোষণার পরে পরিকাঠামো তৈরির কাজে গতি আনতে বছর গড়িয়ে গিয়েছিল আলিপুরদুয়ারে। কালিম্পং জেলার ক্ষেত্রে তেমন কিছু যাতে না ঘটে, তাই নিজেই হাতেকলমে কাজ এগিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে কিছু পরামর্শও দিয়ে রাখলেন। যেমন, যে কাজটা দু’টি দফতরের জেলা আধিকারিক বসে কথা বললেই হতে পারে, তা নিয়ে দিনের পর দিন ফাইল চালাচালি করতে নিষেধ করেছেন তিনি। দৃষ্টান্ত হিসেবে পূর্ত দফতরের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের আলোচনার মাধ্যমে কালিম্পঙে নবনিযুক্ত আমলাদের অফিস-বাসভবনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। শহরের মধ্যে থাকা সংশোধনাগার যাতে দ্রুত সরিয়ে সেখানে দার্জিলিং ম্যালের মতো পরিকাঠামো তৈরি করা যায়, সে জন্য কারা ও পূর্ত দফতরের সমন্বয় সাধনের জন্য নতুন জেলাশাসক এন বিশ্বনাথকে বাড়তি উদ্যোগী হতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী অফিসারদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় বলে দিয়েছেন, ‘আলিপুরদুয়ারে পরিকাঠামো তৈরির কাজে গোড়ার দিকে ঢিলেমি হয়েছিল। কালিম্পঙে তার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি দফতরের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় থাকতে হবে। ডিএম-এসপি-সহ নানা দফতরের জেলা আধিকারিকদের মিলেমিশে যত দ্রত সম্ভব কালিম্পং জেলার পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ করতে হবে।’
আড়াই বছর আগে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন রাজ্যের ২০তম জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় আলিপুরদুয়ার। কিন্তু, জেলার পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু হতেই বছর গড়িয়ে যায়। দল ও প্রশাসনের নানা সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই খবর পৌঁছয়। তিনি আসরে নামার পরে ২০১৬ সালে কাজে গতি আসে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ২১তম জেলা হিসেবে কালিম্পং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। পরদিনই মুখ্যসচিব-সহ নানা দফতরের শীর্ষ আমলাদের নিয়ে টাউন হলে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথায় কোন অফিস হবে, কোন দফতরের ফাঁকা জায়গা বা বাংলো রয়েছে, তা নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নেন সেই বৈঠকেই। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ফাঁকা জমি, বাংলো, অব্যবহৃত আবাসন এক দফতর থেকে অন্য দফতরে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। ফাইল চালাচালিতে অনেকটা সময় চলে যায়। তাই মুখ্যমন্ত্রী টাউন হলে বসেই পূর্ত দফতরের কিছু জায়গা নতুন জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কালিম্পঙের চিত্রের কাছে বিপণন কেন্দ্র গড়ার জন্য জমি রয়েছে বন দফতরের আওতায়। এটা জানার পরে মঞ্চ থেকেই হলে উপস্থিত বন দফতরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বন অফিসারদের তিনি জানিয়ে দেন,
দ্রুত জমিটি দেখে বিধি মেনে পদক্ষেপ করা হোক। কালিম্পং জেলা প্রশাসনের একাধিক অফিসার একান্তে জানান, ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হওয়ায় নতুন জেলার ডিএম, এসপি, জেলা জজ-সহ অন্তত ১০টি অফিস ও বাসভবনের সমস্যা প্রাথমিক ভাবে মিটেছে। না হলে ফাইল চালাচালিতে হয়তো বছর গড়িয়ে যেত।
মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝেই কালিম্পঙে এখন জোর গতিতে কাজ চলছে। শুক্রবারই ব্লক ও মহকুমা পর্যায়ের অফিসারদের তরফে কোথায়, কী ধরনের ফাঁকা জায়গা, ব্যবহার্য সরকারি বাসভবন রয়েছে, সেই তথ্য পৌঁছেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। সংশোধনাগার যে এলাকায় সরানোর কথা ভাবা হচ্ছে, সেই গ্রাহামস হোম লাগোয়া জমি জরিপের প্রস্তুতিও হচ্ছে। কালিম্পংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জন আন্দোলন পার্টির সভাপতি হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে গোড়া থেকে শক্ত হাতে হাল ধরায় তাড়াতাড়িই সব হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy