Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

দুর্দিনেই পাশে, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এ দিন আগাগোড়াই মমতা সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় সরকারের। কখনও সিএএ নিয়ে কটাক্ষে বিদ্ধ করেন তাদের।

 একান্তে: দার্জিলিংয়ের জনসভায় বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

একান্তে: দার্জিলিংয়ের জনসভায় বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

সৌমিত্র কুণ্ডু
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২১
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা উপনির্বাচনে ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে পাহাড়। আর তার পরেই অসমে এনআরসি চালু করার হাওয়া এসে লেগেছে দার্জিলিঙে। তাতে আতঙ্কিত পাহাড়বাসী গোর্খারাও। এ বারের সফরে সেই সূত্রেই বারবার গোর্খাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সিএএ-বিরোধী পদযাত্রার শেষে জনসভাতেও একই কথা বললেন তিনি।

তবে তার আগে তিনি যে পাহাড়কে ভালবাসেন, সেটা জানাতেও ভোলেননি। তাঁর ভাষণের অনেকটা অংশই ছিল নেপালিতে। কাগজ দেখে পড়তে গিয়ে ভুল করেছেন। হেসে আবার কাগজ তুলে দেখিয়ে বলেছেন, ‘‘দেখুন, সব কিন্তু নেপালিতেই লেখা।’’ তার সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘আস্তে আস্তে হয়ে যাবে। আর কিছু দিন চেষ্টা করলেই শিখে যাব।’’ বক্তৃতাতেও তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ ভারত, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আমাদের হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড।’’

এ দিন আগাগোড়াই মমতা সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় সরকারের। কখনও সিএএ নিয়ে কটাক্ষে বিদ্ধ করেন তাদের। কখনও দার্জিলিং পাহাড়ের উন্নয়নে বিজেপি কী করেছে, সেই প্রশ্ন তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কে নাগরিক হবে, সেটা কি বিজেপি বলে দেবে?

একই সঙ্গে পাহাড়ের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আট বছর ধরে দেখছি, কোনও কাজ হয়নি।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি এনআরসি-র সঙ্গে পাহাড়ের আতঙ্ককে জুড়ে দেন। অসমে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে লাখখানেক গোর্খার নাম, এই দাবি বহু বার করেছে তৃণমূল। এ দিনও সেই প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ চিন্তায় রয়েছে, সিএএ, এআরসি হলে কোথায় যাবে? চলে যেতে হবে। নাগরিকত্ব থাকবে কি না ভাবছেন।’’ তার পরেই বলেন, ‘‘আমি, আপনি সবাই নাগরিক। তাঁর কথায়, ‘‘আপনার নাগরিকত্ব কে ছিনিয়ে নেবে? বাঙালি, বিহারি, রাজস্থানি, নেপালি, তামাং, লেপচা— সবাই নাগরিক। আমরা ভাইবোনের মতো রয়েছি। কারও উপাধি আলাদা হতে পারে, কারও সম্প্রদায় আলাদা, কারও ঘর আালাদা। কেউ বলে আমি বাঙালি, কেউ বলে গোর্খা, বিহারি, গুজরাতি। দিনের শেষে আমরা বলি, আমরা ভারতীয়। হিন্দুস্থানি। হিন্দুস্থান আমার দেশ।’’ পাহাড়ের মানুষকে বিজেপি কিছু দেয়নি, এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় ওরা পয়সা নিয়ে আসে। কী ভাবে, পাহাড়ের মানুষ গরিব? পাহাড়ের মানুষের ইজ্জত রয়েছে। এটা তাদের দেখিয়ে দিতে হবে।’’

মমতা বলেন, ‘‘পাহাড়ের লোকদের সঙ্গে অনেক বড় অন্যায় হয়েছে। মণিপুর, ত্রিপুরা, অসম, নাগাল্যান্ড, মিজোরামে গোলমাল হচ্ছে দেখে সেখানে প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। তা হলে দার্জিলিঙে কেন চালু করবে?’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে ভোট না দিলেও পরোয়া নেই। যখন দেখি দার্জিলিঙের মানুষ বিপদে। তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে আমি চলে এসেছি। কারণ আপনারা আমার প্রাণ।’’

দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার দফতর সূত্রে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যে সব অভিযোগ তুলেছেন, সব মিথ্যে। রাজুর বক্তব্য, পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে কিছু না বলে এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে কিছু মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ বোকা নন। পাহাড়ে আন্দোলনের সময় ১১ জনকে গুলি করে মারা হয়েছিল। পাহাড়কে শান্ত না করে তিনি যাবেন না বলেছিলেন। পরে রাতের অন্ধকারে চলে যান।’’ বিজেপির ওই নেতার দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE