Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জেরবার, তবু হিংসায় না

বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগের সামনে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। 

বিচরণ: জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে চত্বরে ঘুরছে কুকুরছানারা। ছবি: সন্দীপ পাল

বিচরণ: জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে চত্বরে ঘুরছে কুকুরছানারা। ছবি: সন্দীপ পাল

অর্জুন ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

রাতের বেলায় বিস্কুটের প্যাকেট বের করতেই ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে এসেছিল একটি নেড়ি। সঙ্গীর ডাক শুনে আরও দু’টি নেড়ি হাজির হল। তাদের ভয়ে বিস্কুটের প্যাকেটটাই ফেলে দেন ধূপগুড়ি থেকে হাসপাতালে আসা বিনোদ রায়। বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগের সামনে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর।

দুপুরবেলায় দু-একটা দেখা গেলেও সন্ধের পর থেকে আশেপাশের এলাকার সব কুকুরের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে জেলা হাসপাতাল। এই অবস্থার জন্য ডাক্তার-নার্সদের অনেকে দায়ী করছেন রোগীর পরিজনদেরই। রাতে রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালের সামনে শেডের নীচে থাকেন। খাওয়ার পরে উচ্ছিষ্ট ছুড়ে ফেলেন। তার লোভেই কুকুরের দল হাসপাতালে রাতে ভিড় করে বলে দাবি।

রোগীর পরিবারের সদস্যরাই শুধু নয়, কর্তব্যরত নার্স এবং চিকিৎসা কর্মীদেরও এই সমস্যায় ভুগতে হয় বলে অভিযোগ। রাতের বেলায় ডিউটি শেষ করে পাশে হস্টেলে যাওয়ার সময় কুকুর পিছু নেয় বলে দাবি এক নার্সের। ক’দিন আগে এসএনসিইউয়ের এক নার্সের পায়ে একটি কুকুর আঁচড়েও দেয় বলে অভিযোগ।

এনআরএস হাসপাতাল কাণ্ডের পরে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের কুকুরগুলি নিয়েও চিন্তায় কর্তৃপক্ষ। তবে বির্তকের জেরে সরাসরি তাঁরা কিছু বলতেও চাইছেন না। হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘কুকুরের উপদ্রব তেমন নেই। তবু আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।’’ নার্স এবং হাসপাতাল কর্মীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠান। পুরসভা পথ-কুকুরদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিক। বিনোদবাবুর স্ত্রী তাঁদের দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে গত তিন দিন ধরে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। বিনোদবাবু বলেন, “পরপর দু’রাতে দেখেছি, কুকুরে ভরে যায় হাসপাতাল চত্বর। সন্ধে থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। রাতে কুকুরের দখলে চলে যায় এলাকা। অবস্থা এমন যে তাড়ালেও যায় না।”

এই ভয়ের মধ্যেও বিনোদবাবু কিন্তু এনআরএসের নার্সদের মতো নৃশংসার বিরোধী। তাঁর কথায়, কুকুর সামলানো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুরসভার কাজ। তা বলে কুকুরশাবকদের ধরে এনে এ ভাবে মেরে ফেলাটা ভয়াবহ।

শুধু রাতের আশ্রয়স্থলেই নয়, হাসপাতালের বর্জ্য আর্বজনা ফেলার জায়গায় কুকুর এবং শুয়োর প্রায়ই দেখা যায়। এ ছাড়াও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড এলাকা, রান্নাঘরের সামনে, ব্লাড ব্যাঙ্ক এলাকা এবং বর্হিবিভাগেও কুকুর ঘুরে বেড়ায় বলে অভিযোগ।

জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যদি কখনও কোনও প্রয়োজনে এই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি সাহায্য চায়, তা হলে পুরসভা অবশ্যই সহযোগিতায় প্রস্তুত।’’

স্বেচ্ছাসেবী যে সব সংগঠন পথকুকুরদের নিয়ে কাজ করে, তাদের বক্তব্য, মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। তাঁদের অনেকেই বলছেন, জলপাইগুড়িতে পথকুকুরদের নির্বীজকরণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। কুকুরের চিকিৎসা করা, পথকুকুরদের নিয়মিত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “কুকুরের সংখ্যা কমাতে প্রয়োজন নির্বীজকরণ। এক-একটি কুকুরের নির্বীজকরণে গড়পরতা ২ হাজার টাকা প্রয়োজন। এখন না থাকলেও এই পরিকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। আমরা প্রশাসনের কাছে বরাদ্দ চেয়েছিলাম। সে বরাদ্দও পাইনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Attack Stray Dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE