Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কেউ ঘরে ফিরেছেন শুনলেই ছুটছেন রউফ

রউফ দেরি করেননি, সরকারি নির্দেশ মেনে হোম কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করেন তাঁদের।

আব্দুর রউফ। নিজস্ব চিত্র

আব্দুর রউফ। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৫:৫৩
Share: Save:

সেদিন দুপুরে সবে খেতে বসেছিলেন। গ্রামের এক যুবক দৌড়ে এসে জানায়, শৌলমারির গ্রামে ভিনরাজ্য ফেরত শ্রমিকদের নিয়ে গোল বেধেছে। খাবারের থালা পাশে সরিয়ে রেখে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আব্দুর রউফ। গ্রামের পথেই মানুষের জটলা। একটু দূরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধা জাহারা বিবি। আরও কয়েকজনের চোখে জল। দূরে তখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন সফিকুলরা। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত তাঁরা।

রউফ দেরি করেননি, সরকারি নির্দেশ মেনে হোম কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করেন তাঁদের। তাঁকে এগিয়ে আসতে দেখে একে একে হাত বাড়িয়ে দেন সবাই। রউফ বলেন, “ওঁরা সাতজন ফিরেছে মহারাষ্ট্র থেকে। আমরা গ্রামের মানুষরাই তাঁদের কোয়রান্টিনে রেখেছি।” রউফ তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ওঁদের জন্য ১৪ দিনের বাজার নিয়ে এসেছেন।

বাড়ি-ঘর, নাওয়া-খাওয়া ভুলে রউফ ঘুরে বেড়াচ্ছেন চারদিকে। কে রেড জোন থেকে এসেছেন, কে অরেঞ্জ, সে সব দেখে বাছাই করছেন না। সবার বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন নিয়মিত। কারও কোনও অসুবিধে হলে এক ছুটে পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে। ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও রয়েছে তাঁর কাঁধে। পেশায় পার্টির হোলটাইমার রউফ। সেই পদ দিয়ে অবশ্য তাঁর বিচার করছেন না কেউ। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, সবাই যখন ভিনরাজ্য থেকে আসা মানুষদের দেখে পালিয়ে যাচ্ছেন, রউফ কাছে গিয়ে তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এর বাইরে আর কোনও পরিচয় লাগে না। তাঁর বাড়ি লাগোয়া দাসপাড়ায় কেরল থেকে ফিরেছিলেন বানুয়া দাস। ওঁর বাবা হরিনাথ দাস তাঁকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। গ্রামেও চলতে থাকে কানাঘুষো। তা নিয়ে ভয়ে ছিলেন বানুয়াও। ট্রেন থেকে নিউ কোচবিহারে নেমে দিনহাটা থেকে হাঁটাপথে বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই গ্রামে পৌঁছে রউফ পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের পরামর্শেই সাহেবগঞ্জে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করেন বানিয়া। তাঁর বাড়িতেও ১৪ দিনের জন্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন রউফ। একই ভাবে বাজেজামা শেওড়াগুড়ির অপিয়া বিবি ও তাঁর ছেলে তহিদুল ইসলাম নয়ডা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। কী করে থাকবেন তাঁরা, সেই চিন্তার সময়েই পৌঁছে যান রউফ। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ওই বাড়ি ঘিরে দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তাঁদের বাড়ি।

তাঁর স্ত্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাড়িতে ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকান রয়েছে। তা দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাঁর সংসার চলে। তাঁর এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। রউফ বলেন, “মানুষের বিপদে পাশে থাকতে ভাল লাগে।” বেঙ্গালুরু থেকে নাজিরহাটে ফেরা নিবারণ দাস হোম কোয়রান্টিনে ছিলেন দুই সপ্তাহ। নিবারণ বলেন, “রউফ খুব ভাল মানুষ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE