Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

টাকার অভাবে বাড়িতে আনা গেল না স্ত্রীর দেহ

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই মহিলার নাম মুন্নি রাউত (৫০)৷ তাঁর বাড়ি জয়গাঁর সুভাষ পল্লি এলাকায়৷ নিঃসন্তান মুন্নিদেবীর বাড়িতে তাঁর স্বামী, পেশায় দিনমজুর বাচ্চু রাউত ছাড়া আর কেউ নেই৷

একাকী: স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে রাস্তায় বাচ্চু রাউত। নিজস্ব চিত্র

একাকী: স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে রাস্তায় বাচ্চু রাউত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

অভাবের জেরে মৃত স্ত্রীর দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেন না স্বামী৷ রবিবার আলিপুরদুয়ারে এমনই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ৷ শেষ পর্যন্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আলিপুরদুয়ারের শ্মশানেই ওই মহিলার দেহ সৎকার করা হয়৷

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই মহিলার নাম মুন্নি রাউত (৫০)৷ তাঁর বাড়ি জয়গাঁর সুভাষ পল্লি এলাকায়৷ নিঃসন্তান মুন্নিদেবীর বাড়িতে তাঁর স্বামী, পেশায় দিনমজুর বাচ্চু রাউত ছাড়া আর কেউ নেই৷

এ দিন আলিপুরদুয়ারে বাচ্চুবাবু জানান, “মাস তিনেক ধরে খুবই অসুস্থ ছিল আমার স্ত্রী৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, পেটে জল হয়ে গিয়েছিল৷ সে জন্য কখনও শিলিগুড়ি, তো কখনও কোচবিহারের হাসপাতালে ছুটেছি স্ত্রীকে নিয়ে৷ গত সপ্তাহেই স্ত্রী কোচবিহার থেকে ছাড়া পান৷ কিন্তু দিন দু’য়েক আগে ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করাই৷ রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়৷”

এর পরই লড়াইটা শুরু হয় বাচ্চুবাবুর৷ তাঁর কথায়, স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য গত কয়েকদিন টানা কাজ করতে পারেননি৷ হাতে টাকা-পয়সাও ছিল না৷ এই অবস্থায় স্ত্রীর দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে হাসপাতাল চত্বরে থাকা গাড়ির চালকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন৷ এমনকী হাসপাতাল কর্মীদেরও তিনি সমস্যার কথা জানান বলে দাবি করেন বাচ্চুবাবু৷ তিনি বলেন, “সবাইকে বলেও কোনও সমাধান সূত্র পাইনি৷ একজন চালক বলেছিলেন অন্তত এক হাজার ৭০০ টাকা লাগবে৷ কিন্তু অত টাকা আমার কাছে ছিল না৷”

এই অবস্থায় আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা তাঁর ভায়রাভাই আন্না বাঁশফোরের সঙ্গে আলোচনা করে মুন্নিদেবীর দেহ আলিপুরদুয়ার শ্মশানেই দাহ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ বিকাল বেলায় আন্নার ভ্যান রিকশায় দেহটি তুলে কলেজ পাড়ায় আন্নার বাড়ির দিকে রওনা হন তাঁরা৷

তবে পথেই দু’জনকে এভাবে ভ্যান রিকশায় দেহ নিয়ে যেতে তাঁদের পথ আটকান একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা৷ তাঁরা গোটা বিষয়টি শোনেন৷ সংগঠনটির অন্যতম কর্তা রাতুল বিশ্বাস বলেন, “একজন স্বামী টাকার অভাবে তাঁর স্ত্রীর দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন না এটা ভাবাই যায় না৷ আলিপুরদুয়ারে এমন বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন আগে কখনও হইনি৷” এর পর ওই সংগঠনের সদস্যরা উদ্যোগী হয়ে একটি শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে৷ কিন্তু ততক্ষণে স্থানীয় শ্মশানে স্ত্রীর দেহ সৎকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন বাচ্চুবাবু৷ তিনি সেই সিদ্ধান্তেই অনড় থাকেন৷ শেষ পর্যন্ত ওই গাড়িতে করেই আলিপুরদুয়ার শ্মশানে দেহ নিয়ে আসা হয়৷

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রাজা সাহা বলেন, “কারও দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সরকারি কোনও ব্যবস্থা হাসপাতালে নেই৷ কিন্তু ঘটনাটা আগে একটু জানতে পারলে, এমনটা হতে দিতাম না৷ কোনও ভাবে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতাম৷”

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মলও বলেন, “বিষয়টি আগে জানলে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা অন্য কোনও উপায়ে ওই মহিলার দেহ বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেত৷ আগামিদিনে কেউ যাতে এমন সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য হাসপাতালের আধিকারিক ও কর্মীদের নজর রাখতে বলব৷”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead Body Woman Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE