কানে ভেসে আসছে বহু মানুষের কান্না, আর্তনাদ। চোখের সামনে পড়ে রয়েছে ফুটফুটে বছর তিনেকের মেয়ের নিথর দেহ। তার মধ্যেই দাঁতে দাত চেপে ‘কাজ’ করে যেতে হয়েছে ওঁদের।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে কাটানো টানা ওই ছ’ঘণ্টার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না মালদহ মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অলক মজুমদার। সোমবার দৌলতাবাদে বাস দুর্ঘটনার পরেই মালদহ মেডিক্যাল থেকে পাঠানো হয়েছিল চিকিৎসক দল। দুপুর আড়াইটে নাগাদ পুলিশ প্রহরায় তাঁরা রওনা হন। অলকবাবু ছাড়াও ছিলেন ওই বিভাগের চিকিৎসক আবু আহমেদ আখতার আলম। সন্ধে ছটা থেকে তাঁরা দু’জন ও মুর্শিদাবাদের পাঁচজন, মোট সাত চিকিৎসক মিলে শুরু করেন ময়নাতদন্ত। রাত ১২টা পর্যন্ত চলেছে সেই কাজ।
মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ মালদহে ফেরেন তাঁরা। মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে এলেও এখনও যেন কানে বাজছে সেই স্বজনহারার কান্না, চোখ বুজলে যেন দেখতে পাচ্ছেন নিথর দেহের সারি। অলকবাবু বলছিলেন, ‘‘চাকরিজীবনে অজস্র মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছি। তবে একসঙ্গে ৩৬ জনের ময়নাতদন্ত! ভাবতেই পারছি না।’’
হাসপাতালের পরিস্থিতিও ছিল হৃদয়বিদারক। মর্গের বাইরে অসংখ্য মানুষ হাউহাউ করে কাঁদছেন। কেউ বা তাঁদের প্রিয়জনের দেহ সনাক্ত করতে এসে জ্ঞান হারাচ্ছেন। সেই পরিস্থিতিতেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল চিকিৎসকদের। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘ওই বুকফাটা কান্নার শব্দ শুনতে শুনতে আমাদের দেহগুলি সেলাই করতে হয়েছে। চোখে জল এসে যাচ্ছিল। এখনও যেন সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করছে।’’ মালদহ থেকে যাওয়া আরেক চিকিৎসক আবু আহমেদ বলেন, ‘‘দেহগুলি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওঁরা একেবারে শেষ পর্যন্ত বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। সে কথা মনে পড়লে এখনও কান্না পেয়ে যাচ্ছে।’’ মেডিক্যালের সুপার অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy