Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দৃষ্টি ছাড়াই নজর কাড়ছে অজয়, সঞ্জিতরা

দৃষ্টি নেই তো কী? গানের সুরে নজর কাড়ছে ওরা। আর গান শেষ হলে হাততালিতে ফেটে পড়ছে গোটা হল। শুধু কোচবিহার জেলা নয়, গানের জন্য ডাক পড়ছে বাইরের জেলা থেকেও।

শিল্পী: অনুষ্ঠান মাতাচ্ছে পড়ুয়াদের দল। নিজস্ব চিত্র

শিল্পী: অনুষ্ঠান মাতাচ্ছে পড়ুয়াদের দল। নিজস্ব চিত্র

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

দৃষ্টি নেই তো কী? গানের সুরে নজর কাড়ছে ওরা। আর গান শেষ হলে হাততালিতে ফেটে পড়ছে গোটা হল। শুধু কোচবিহার জেলা নয়, গানের জন্য ডাক পড়ছে বাইরের জেলা থেকেও।

ওরা হল অজয় বাড়িয়া, রিতুরাজ খালকো, সঞ্জিত দাস, অভিজিৎ বর্মন, বিশ্বদীপ রায়, প্রহ্লাদ বর্মনের মতো একঝাঁক কিশোর। সকলেই কোচবিহারের সরকারি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। ওদের গানে মাতছে শহরের রবীন্দ্রভবন থেকে ফুলমেলার মতো অনুষ্ঠান।

তবলায় সংগত করছে তাঁদেরই সহপাঠী বিকাশ বর্মন। গলা ছাড়াও অজয় সুর তুলতে পারে সিন্থেসাইজারেও। এছাড়াও আছে বেশ কয়েকজন। ওদের অদম্য ইচ্ছেশক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। আমলা থেকে আমজনতা এই গানের দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।

ওই কিশোরদের গানে মজেছেন কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহাও। তাঁর উদ্যোগে রবিবার রবীন্দ্রভবনে একটি ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ওই পড়ুয়াদের আনার ব্যবস্থা হয়। ১০ মার্চ শিলিগুড়িতে ওই ব্যাঙ্কের সহযোগিতাতেই বড়মাপের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানেও ডাক পড়েছে দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের ওই পড়ুয়াদের। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিল ওই পড়ুয়ারা। যা মন ছুঁয়ে যায় জেলাশাসকের। তারপর থেকেই জেলার বাইরে ওই পড়ুয়াদের প্রতিভা তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন জেলাশাসক। রবিবার পুলিশ সুপারের পাশে বসে রবীন্দ্রভবনে তাদের অনুষ্ঠান দেখেন তিনি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডে বলেন, “ওই পড়ুয়ারা সত্যিই প্রতিভাবান। ওদের গান খুব ভাল লেগেছে। পুলিশের অনুষ্ঠান হলে ডাকব।”

যাদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান সেই উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোরেন্দ্র সিংহ বেদি বললেন, “খুবই ভাল লেগেছে। শিলিগুড়ির অনুষ্ঠানে প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ দিতেই ওদের ডাকা হচ্ছে।” তিনি জানান,ওই স্কুলে টকিং সফটওয়্যারের বিশেষ প্রযুক্তি চালুর করারও চেষ্টা হচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ২৬ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সাংস্কৃতিক চর্চায় যুক্ত। স্কুলেই গান শেখানো হয়। পাশাপাশি সেতার, সিন্থেসাইজারের মতো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য শিক্ষকের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অনিন্দ্য চৌধুরী বলেন, “প্রত্যেক পড়ুয়া মনোযোগী। তার ফলও পাচ্ছে। নানা অনুষ্ঠানেই ওদের ডাক আসছে।”

খুশি ওই পড়ুয়ারাও। অজয়, বিকাশদের কথায়, “সবাই ভাল বলছে শুনে খুব উৎসাহ পাচ্ছি।” তারমধ্যেই একজন গুনগুন করে সুর তোলে, ‘আলোকের ঝর্ণা ধারায়...’। হয়তো বলতে চায়, চোখের নয় মনের আলোই দূর করে আসল অন্ধকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Singers Blind
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE