মিহির গোস্বামীকে আলিঙ্গন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার। — নিজস্ব চিত্র
তাঁরা দু’জনে দুই দলের। কিন্তু বন্ধুত্বকে কি দল দিয়ে আলাদা করা যায়? করা যে যায় না, সেই ছবিই দেখল শিলিগুড়ি।
যখন শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় যখন বিজেপি সাংসদ তৃণমূল বিধায়ককে বললেন, ‘‘কী রে! কেমন আছিস! এই বয়সে পা ভাঙলি!’’
তৃণমূল বিধায়ক পাল্টা মুচকি হেসে বললেন, ‘‘তোমার দাড়ি তো সব সাদা হয়ে গেল। এখনও এত ভাল বাংলা বলো!’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদ করার সময় থেকে পরিচয়, বন্ধুত্ব সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও মিহির গোস্বামীর। ষাটের দশকের শেষে দু’জনের পরিচয়। পরে কংগ্রেস ছেড়ে অহলুওয়ালিয়ার বিজেপিতে যাওয়া, পাকাপাকি দিল্লিতে থাকা। মিহিরবাবুও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল, কোচবিহারেই রাজনীতির কেন্দ্রস্থল। মাঝের এই সময়ে দু’জনের দেখা হয়নি দীর্ঘ কয়েক বছর। মোবাইল নম্বরও ছিল না। শুক্রবার রাতে একজনের মারফত মিহিরবাবুর নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার কথা জানতে পারেন অহলুওয়ালিয়া। তারপরেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি দেখা করতে যাবেন।
এতদিন যে কথা হয়নি, তা অবশ্য বোঝার উপায় ছিল না দুজনকে দেখে। যেন ফিরে গিয়েছেন সত্তরের কলকাতায়। দু’জনের মুখে মুখে ফিরল হার্ডিঞ্জ হস্টেলে মোটা চালের ভাত খাওয়ার স্মৃতি, কলকাতার ফুটপাতে চপ-জিলিপি খাওয়ার কথা। তখন কে বলবে কোচবিহারে লোকসভা উপনির্বাচনের হাড্ডাহাড্ডি প্রচার চলছে। সেখানেই তাঁদের দুই দল একে অপরকে বিঁধছে!
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতার সঙ্গে বিজেপির মন্ত্রীর সাক্ষাৎ নিয়ে জল্পনা-গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ির রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসার আগে তৃণমূলের কর্মী-নেতাদের অনেকেই উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেন নার্সিংহোমের আশেপাশে। কেউ কেউ আবার মিহিরবাবুর ঘরেই ঢুকে বসে থাকেন। সাংসদ এবং কৃষি বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অহলুওয়ালিয়া যখন নার্সিংহোমের চারতলায় উত্তরবঙ্গ রাষ্টীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান মিহিরবাবুর কেবিনে দরজা খুলে ঢোকেন, তখনই জল্পনার অবসান।
সম্প্রতি কোচবিহারে দলের এক বৈঠকের শেষে পিছলে মালাইচাকির হাড় তিন টুকরো হয়ে যায় মিহিরবাবুর। পুরোনো বন্ধু হলেও অহলুওয়ালিয়া এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তাও আবার বিরোধী দলের। তিনি যে দেখা করতে আসবেন তা ভাবতেই পারেননি বলে জানালেন মিহিরবাবু। বললেন, ‘‘আমরা কত ভাল বন্ধু ছিলাম, তা আজ বুঝলাম। অনেক স্মৃতি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ব্যস্ততা বেশি। তবু যে উনি এলেন এটা ভেবেই ভাল লাগছে।’’ প্রায় ঘণ্টাখানেক তাঁদের কথা হয়। অহলুওয়ালিয়ার কথায়, ‘‘রাজনীতি আলাদা হতে পারে, কিন্তু সম্পর্ক আগের মতো একই রয়েছে। বাংলার মাটিতেই আমার পড়াশোনা, রাজনীতির শিক্ষা তাই সৌজন্যের সংস্কৃতি ভুলে যাইনি।’’
দু’জনের মধ্যে যে রাজনীতির কথা হয়নি তা নয়, তবে তা নিতান্তই ঠাট্টার ছলে। যা শুনে ঘরে থাকা তৃণমূল বিজেপি উভয় দলের কর্মীরাই বারবার হেসে উঠেছেন। তাঁরা অনেকেবললেন, যে সৌজন্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, বর্তমান প্রেক্ষিতে তা বিরল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy