‘দিদিকে বলো’র প্রচারে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র
কর্মসূচি ছিল ‘দিদিকে বলো’। গত লোকসভা ভোটে ৮৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির একটি অংশে সেই কর্মসূচিতে গিয়ে মন্ত্রী গৌতম দেব স্থানীয় বাসিন্দাদের বললেন, ‘‘কোনও সমস্যা বা অভিমান হলে রাগারাগি করুন, গালাগালি করুন, ইচ্ছা করলে গালে দুটো চড়ও মারতে পারেন, কিন্তু আমাদের ছেড়ে যাবেন না। ভুল হলে বলুন, মাথা পেতে শুধরে নেব।’’ সোমবার সন্ধ্যা থেকে ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মসূচি শুরু করেন মন্ত্রী।
মঙ্গলবার সাত সকালে প্রাতঃভ্রমণ করে আবার রাস্তায় নামেন গৌতমবাবু। বিভিন্ন বাড়িতে, দোকানে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরই মধ্যে এক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীর দোকানে যান মন্ত্রী। তাঁর পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার পরে, তাঁর সঙ্গ না ছেড়ে তৃমমূলের সঙ্গে থাকার অনুরোধ করেন মন্ত্রী। তার পরে বাজার থেকে গ্রিল কারখানায় যান তিনি। প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। কলেজ পডুয়াদের গানও শোনেন মন্ত্রী। ডেঙ্গি নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ঘোঘোমালি বাজার থেকে জবরদখল সরানো, পার্কিং ব্যবস্থা সাজা, তিনটি স্কুলকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ানের মতো বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।
গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘দিদিকে বলো কর্মসূচিটিই তৈরি হয়েছে, মানুষের মাঝে যাওয়ার জন্য। তাঁদের সমস্যার কথা কলকাতায় কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা আমরা দেখছি। তা ছাড়া, নিজেদের সাধ্য মতো সাহায্য করার চেষ্টাও আমরা করছি।’’ তিনি জানান, গত ভোটের ফলে তো তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তিনি বলেন, ‘‘কিছু মানুষ হয়তো কোনও কারণে আমাদের থেকে সরে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে অভাব, অভিযোগ শুনে তা আমরা শুধরে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। মানুষকে আমাদের পাশে থাকতে অনুরোধ করছি।’’
শিলিগুড়ি মহকুমা গ্রামে চলো বলেও কয়েক বছর আগেই এই ধরনের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন মন্ত্রী। এ বার ‘দিদিকে বলো’ ছাড়াও একই রকম ভাবে পুর এলাকার ওয়ার্ড পরিক্রমাও শুরু করেছেন গৌতমবাবু। ফুলবাড়ি, ডাবগ্রামের বিভিন্ন এলাকার পর এ বার নিজেদের বিধানসভার আওয়ায় থাকা পুর ওয়ার্ডগুলিতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি করছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ড সংযোজিত এলাকা বলে চিহ্নিত। এর অধিকাংশ ওয়ার্ড গৌতমবাবুর ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। ২০১১ সাল থেকে তিনি নিজে বড় লিড নিয়ে জিতে আসলেও এ বার লোকসভায় পরিস্থিতি পাল্টেছে। কেন তৃণমূল পিছিয়ে গিয়েছে?
তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিজেপির হাওয়া ছাড়াও দলীয় গোষ্ঠী কোন্দল, কিছু জায়গায় সংগঠন শক্তিশালী ভাবে ধরে রাখতে না পারা, দলত্যাগ, জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য, এ সবই ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে দলীয় নেতারা মনে করেন। সে কারণেই মন্ত্রী এখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে সেখানে যাচ্ছেন।
তৃণমূলের অন্দরেরই দাবি, বহু মানুষ গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন। সেখানে থেকেই মানুষের পাশে থেকে অভাব অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে তৃণমূলের।
ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির মতো শিলিগুড়ি শহরেও চলছে দিদিকে বলো কর্মসূচি। গত শনিবার, রবিবার পুর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে টাউন সভাপতি বেদব্রত দত্তের নেতৃত্বে ‘দিদিকে বলো’ হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই ওয়ার্ডের চিকিৎসক থেকে সরকারি আধিকারিকেরা শিলিগুড়ি শহরের যানজট, দূষণ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এলাকার জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থা মজবুত করার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy