Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ায় হুমকির মুখে নাবালিকা

হবিবপুরের স্কুল ছাত্রীকে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে আটকে রেখে গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করল পুলিশ। বুধবারই ওই নির্যাতিতা ছাত্রীটিকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসাপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:৫৯
Share: Save:

হবিবপুরের স্কুল ছাত্রীকে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে আটকে রেখে গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করল পুলিশ। বুধবারই ওই নির্যাতিতা ছাত্রীটিকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসাপাতালে। হবিবপুরের জাজইল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাবুক গ্রামের বাসিন্দা ওই নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের সঙ্গীরা হুমকি দিচ্ছে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রী এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা। অপরদিকে, নির্যাতিতার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছেন অভিযুক্তদের পরিবারের লোকেরা।

পুলিশ জানিয়েছে, মুল অভিযুক্ত শুভময় রায় এবং তাঁর দুই আত্মীয় মনা রায় ও অমর রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন পাঁচ দিনের হেফাজতে চেয়ে ধৃতদের জেলা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় আরেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। আমরা ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হবিবপুরের অষ্টম শ্রেণীর ওই স্কুল ছাত্রীটিকে শ্যালকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ফুঁসলে কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ির নিয়ে যায় প্রতিবেশী যুবক শুভময়। শুভময় ভুটভুটি চালানোর কাজ করেন। তাঁর এক মেয়ে রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ির বাসিন্দা তথা শুভময়ের শ্যালক মাস তিনেক আগে হবিবপুরে ঘুরতে আসে। সেই সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপরেই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। শ্যালকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে শুভময় মেয়েটিকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, সেখানে শুভময় ও তার শ্যালক ওই ছাত্রীকে লাগাতার ধর্ষণ করে। এমনকী ছাত্রীটিকে মারধরও করা হয়। প্রতিবেশিদের বিষয়টি জানালে ইন্টারনেটে ছবি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়।

গত সোমবার রাতে মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। বাসে করে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফিরে আসে। মেয়েটি বাড়ি ফিরে আসতেই গ্রাম জুড়ে হইচই পড়ে যায়। নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার অভিযুক্তদের পরিবারের বিষয়টি জানালে মারধর করে বলে অভিযোগ। তারপরেই হবিবপুর থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে শুভময়কে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া নির্যাতিতা পরিবারের উপরে হামলা চালানোর ঘটনায় ধৃতের আত্মীয় মনা রায় এবং অমর রায়কে ওই দিনই গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ধৃতদের পাঁচ দিনের হেফাজতে চেয়ে আদালতে পেশ করা হয়। তবে অতিরিক্ত দায়েরা আদালত এদিন বন্ধ ছিল। ফলে ধৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। আজ, বৃহস্পতিবার ধৃতদের ফের তোলা হবে জেলা অতিরিক্ত দায়রা আদালতে।

নির্যাতিতা ছাত্রী জানায়, ‘‘আমাকে মারধর দিয়ে ভয় দেখিয়ে শ্যালক ও তার জামাইবাবু মিলে ধর্ষণ করত। প্রতিবাদ করলে মোবাইলে ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত। ভয়ে আমি অত্যাচার সহ্য করছিলাম মাসখানেক ধরে।’’ তিনি জানান, সুযোগ পেয়েই কোনও রকমে বাড়ি পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে মাকে সমস্ত ঘটনা জানাই। উল্টে আমার দাদাদেরই মারধর করে অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা। প্রত্যেকের শাস্তি চাই।’’

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দায় চাপিয়েছেন শুভময়ের পরিবার। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিল। ওরা স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছিল। আমরা বাধা দেওয়ায় এখন মিথ্যে মামলায় আমাদের ফাঁসিয়েছে।’’ পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের পূর্ণিমা মার্ডি বলেন, ‘‘লোকমুখেই ঘটনাটি শুনেছি। পুলিশকে খতিয়ে দেখে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Minor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE