Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জেলে বসেই ডাকাতির ছক

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত চার জনই পেশায় গাড়িচালক। তাই চোরাই গাড়ি জোগাড় করে জেলায় জেলায় ঘুরে পেট্রল পাম্পে ডাকাতির ছক তৈরি হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৮
Share: Save:

মাস ছয়েক আগেও কেউ কাউকে ঠিকমতো চিনত না। মাদক থেকে গাড়ি চুরি বা আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় সকলেই ছিল ইসলামপুর সংশোধনাগারে। সকালে সেলের বাইরে ঘোরাঘুরি, দুপুর রাতের খাবারের সময় সকলেই চোপড়া ব্লকের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে পরিচয়ও হয়। পুজোর আগের সেই ইসলামপুর জেলে বসে নতুন দল তৈরি করে পেট্রল পাম্পে ডাকাতিতে ধৃত মহম্মদ খইরুল। সোমবার সন্ধ্যা থেকে টানা জেরায় এ কথা কবুল করেছে সে এবং তার সঙ্গী মহম্মদ সরিফুদ্দিন, সুব্রত অধিকারী ও মহম্মদ রাজু, জানায় পুলিশ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এনজেপি থানায় তাদের জেরা করা হয়। অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, সব শেষে মালদহের পাম্পে ডাকাতি করে বিহারে পালানোর ছক কষে তারা।

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত চার জনই পেশায় গাড়িচালক। তাই চোরাই গাড়ি জোগাড় করে জেলায় জেলায় ঘুরে পেট্রল পাম্পে ডাকাতির ছক তৈরি হয়। সেই সঙ্গে টাকা জোগাড় করতে বিহার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এনে বিক্রিও শুরুর ছকও কষে তারা। প্রথম জামিন পায় খইরুল, তার পরে একে একে সুব্রত, সরিফুদ্দিন রাজু জামিন পায়। পুজোর মরসুমে পুলিশি নজরদারি তুলনায় বেশি থাকায় তারা দু’মাস অপেক্ষা করে। চোপড়ায় ঘাঁটি গেড়ে থাকলেও প্রত্যেকে একাধিকবার বিধাননগর, শিলিগুড়ি, ফুলবাড়ি এবং জলপাইগুড়ি ঘুরে গিয়েছে।

জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ডিসেম্বরে শীত পড়লে ‘অপারেশন’ করা হবে, ছক কষে তারা। এর জন্য চোরাই অ্যাম্বুল্যান্সটি জোগাড় করা হয়। ধৃতেরা গাড়িটি চোপড়ার আরেক বাসিন্দার কাছ থেকে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। পলাতক পঞ্চম সেই অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঘটনার পর ওই অভিযুক্ত মাটিগাড়া থেকে পালিয়েছে। আপাতত চোরাই গাড়িটি কোথাকার, তা জানতে সংস্থা এবং পরিবহণ দফতরের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এক ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘পঞ্চম অভিযুক্তের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের খোঁজও চলছে। অভিযুক্তরা জেলে বসে যে ভাবে নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করেছিল, তা ভাবা যায় না।’’

তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, খইরুল দলের মাথা। সুব্রত আগ্নেয়াস্ত্রের দিকটি দেখত। ফাঁসিদেওয়ার পেট্রল পাম্পে সুব্রতই দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। বাকিরা দফায় দফায় গাড়ি চালিয়েছে। গত এক মাসে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কের কোন পাম্পে রাতে এক জনের বেশি কর্মী থাকেন না, তা দেখা হয়। বেশি কর্মী থাকা বা সারা রাত ভিন রাজ্য এবং দূরপাল্লায় ট্রাক যে সব পাম্পে তেল ভরতে ঢোকে, সেগুলি অভিযুক্তরা এড়িয়ে যায়। তিন জেলার পর মালদহের ডাকাতি করতে পারলে বিহারে পালিয়ে যাবে, এমন ছক কষেছিল তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন বছরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উত্তর দিনাজপুরে ঢুকে সেগুলি বিক্রি করা হত। তার পরে দ্বিতীয় দফায় গাড়িটি নিয়ে ফের পেট্রল পাম্পে হানার পরিকল্পনা তৈরি ছিল। সোমবার অভিযুক্তরা পুলিশি হেফাজতে আসার পর উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ শিলিগুড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Robbery Jail Islampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE