Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ন’বছর পর ঘরে ফিরল হারানো মেয়ে

আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি-তে বাবা-মা ও মেয়ের মধ্যে দেখা হতেই তিনজনেরই চোখ বেয়ে নেমে এল জল, আনন্দের কান্না৷

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৩
Share: Save:

বিকাল বেলায় বাড়ির সামনের মাঠে খেলতে বেরিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল সাড়ে আট বছরের শিশুকন্যা৷ মেয়েকে খুঁজতে থানা-পুলিশ থেকে শুরু করে যেখানে পেরেছেন, সেখানেই ছুটেছেন বাবা-মা৷ কিন্তু খোঁজ পাননি৷ এক সময়ে হতাশ হয়ে, মেয়ের খোঁজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁরা৷ অবশেষে সেই মেয়েকেই কিনা খুঁজে পেলেন তাঁরা৷ সেটাও আবার নয় বছর পর৷

শুক্রবার বিকালে আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি-তে বাবা-মা ও মেয়ের মধ্যে দেখা হতেই তিনজনেরই চোখ বেয়ে নেমে এল জল, আনন্দের কান্না৷

বিহারের কিষাণগঞ্জের মোহিউদ্দিনপুর এলাকায় বাড়ি মহম্মদ কাশেমের৷ ফেরি করে চুরি বিক্রি করেন তিনি৷ তাঁর স্ত্রী ছাড়াও ছয় ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে৷ মহম্মদ কাশেমের কথায়, “মেয়ের বয়স তখন সাড়ে আট বছর৷ বাড়ির কাছে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত ও৷ বিকেলবেলায় মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেত৷ একদিন তেমনই খেলতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি৷ গোটা রাত তন্নতন্ন করে খুঁজেছি৷ পরের দিন থানায় অভিযোগ করেছি৷ কিন্তু মেয়ের হদিশ পাইনি৷ শেষপর্যন্ত নয় বছর পর দিন কয়েক আগে কালিম্পং-এর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে খবর পাই, আমার মেয়ে সেখানে ওদের হোমে রয়েছে৷”

নয় বছর পর মহম্মদ কাশেমের মেয়ের বয়স এখন সাড়ে সতেরো বছর৷ কিন্তু এত দিন পর মেয়েকে দেখে চিনতে কোনও অসুবিধেই হয়নি মহম্মদ কাশেম কিংবা তাঁর স্ত্রী বিবি নাগিনার৷ কিশোরীও তার বাবা-মাকে একবারেই চিনতে পারে৷

কিন্তু কিষাণগঞ্জ থেকে কালিম্পঙ পৌঁছল কী করে সেই ছোট্ট মেয়ে?

কিশোরীর কথায়, নয় বছর আগের সেই বিকেলে মাঠে খেলার সময় তাদের বাড়ির কাছেই বিয়ে হওয়া সঙ্গীতা চৌধুরী ও তাঁর বোন সরিতা চৌধুরী দু’জনে কিশোরীর কাছে যায়৷ কিশোরীকে ভুলিয়ে সেদিন বিকেলে তাকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে৷ কিশোরীর অভিযোগ, “কিছু না বুঝে ওদের সঙ্গে সেদিন চলে যাই৷ রাতে আমায় সঙ্গীতার শ্বশুরবাড়িতে রাখা হয়৷ পর দিন ওই দুই বোন আমায় কালিম্পঙে তাঁদের বাবা নাগেশ্বর চৌধুরীর বাড়িতে নিয়ে যায়৷ নাগেশ্বর চৌধুরী একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন৷ ওই বাড়িতে আমাকে দিয়ে দিন-রাত সব কাজ করানো হত৷ একটু কিছু বললেই, কাজে ভুল করলেই কপালে জুটতো মার৷”

সিডব্লিউসি সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে কিশোরী নাগেশ্বরের বাড়ি থেকে পালিয়ে পুলিশের কাছে যায়৷ পুলিশ কিশোরীকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হোমে পাঠায়৷ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম কর্তা সিস্টার ক্ল্যারেট জানান, “ওই সময় কিশোরীও তার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছিল না৷ আমরা পুলিশের সাহায্যে ওই ব্যাঙ্ককর্মীকে চাপ দিয়ে কিশোরীর বাড়ির ঠিকানা বের করি৷”

শুক্রবার আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি-র মাধ্যমে কিশোরীকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসির চেয়ারম্যান কান্তিভূষণ মোহান্ত বলেন, ‘‘এতদিন পর বাবা-মা তাঁর মেয়েকে ফিরে পাওয়ায় আমরা খুশি৷’’

আর বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় কিশোরী জানায়, বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই৷ যা শুনে তার বাবা মহম্মদ কাশেম বলে ওঠেন, ‘‘ওকে অবশ্যই পড়াশোনা করাব৷ যতদূর পড়তে চায় পড়বে ও৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Togetherness Bihar CWC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE