জমি দিতে আপত্তি নেই কারও। ক্ষতিপূরণের হার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সাতটি পরিবার। তাতেই আটকে রয়েছে বাগডোগরা বিমানবন্দরের রানওয়ে আধুনিকীকরণের ২৩ একর জমি। আলোচনাতেই কেটে গিয়েছে সাড়ে চার বছর। দু’হাজার এগারো সালের পরে জমি নেওয়ার প্রক্রিয়া এক ইঞ্চিও এগোয়নি। জমির অভাবে বিমানবন্দরে ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেমের (আইএলএস) পরিকাঠামো তৈরি করা এবং রানওয়ের সামনে সার দিয়ে আলোরস্তম্ভ বসানোর কাজও থমকে রয়েছে। এই দুটি ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে সকাল এবং সন্ধের পরে বাড়তি অন্তত ছ’ঘণ্টা সময়েও বিমান ওঠা-নামা করতে পারত।
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বর্তমান সরকার জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সে কারণে অনিচ্ছুক জমিদাতাদের দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলে দাবি করলেও, আলোচনার সময়ে সরকারি আধিকারিকরা অনড় মনোভাব দেখাতে পারছেন না। তাতেই জট কাটার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত বছরের নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। অধিগৃহিত জমিতেই ওই বৈঠক হয়েছিল। সে বৈঠকে প্রশাসনের তরফে ‘দ্রুত’ জমি হস্তান্তরের আশ্বাস দেওয়া হয়। বৈঠরের পরে চার মাস কেটে গেলেও, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বলে জানা গিয়েছে। উল্টে, আলোচনা ছাড়াই মাসখানেক আগে অধিগৃহিত জমিতে থাকা কয়েকটি বিদুতের খুঁটি সরাতে গিয়ে বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়ে সরকারি কর্মীদের ফিরে আসতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত নভেম্বর মাসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জলপাগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার বরুণ রায়। তাঁর কথায়, “প্রক্রিয়াটি চলছে। আমরাও চাই জমিটি দ্রুত হস্তান্তর করতে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বাগডোগরা বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রায় ৯ হাজার ফুট লম্বা। যে কোনও ধরনের বিমান অবতরণের জন্য তা উপযুক্ত বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সমস্যা তৈরি হয়েছে বিমানবন্দরে আইএলএস না থাকায়। সে কারণে সন্ধের পরে অথবা দিনের অন্য সময়ে আলো কম থাকলে বিমান ওঠানামায় সমস্যা হয়। বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, “আলো কম থাকলে অথবা রাতের বেলায় আকাশ থেকে যাতে বিমানচালক রানওয়ে চিহ্নিত করতে পারেন, তার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক আলো বসাতে হয়। পাঁচটি সারিতে এই আলোর স্তম্ভ বসার কথা। সে কারণেই রানওয়ে লাগোয়া ২৩ একর জমি চেয়ে রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই জমি এখনও পাওয়া যায়নি।”
বিমানবন্দর লাগোয়া বাওকালি জোতের ২০০৭-০৮ আর্থিক বর্ষে খাতায় কলমে জমি অধিগ্রহণ করে একপ্রস্ত ক্ষতিপূরণ বিলিও করা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, এরপরে একাংশ বাসিন্দা বেশি হারে ক্ষতিপূরণ দাবি করায় প্রক্রিয়াটি থমকে যায়। ২৩ একর জমিতে ১১টি পরিবারের বসবাস ছাড়াও, একটি ছোট চা বাগানের অংশ রয়েছে। ২০১১ সালের গোড়ার দিকে চারটি পরিবার-সহ চা বাগানের মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। বিঘাপ্রতি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা-সহ বাড়ি ভাঙার খরচ দেওয়ার কথা হয়। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য কিছুদিন ক্ষতিপূরণ বিলি বন্ধ থাকে। এরপরে বাসিন্দারা বেশি হারে ক্ষতিপূরণের দাবি তুললে পুরো প্রক্রিয়াটিই থমকে যায় বলে অভিযোগ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বিঘাপ্রতি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ স্থির করে বিলি শুরু হলেও, বাসিন্দারা কাঠা প্রতি নূন্যতম আড়াই লক্ষ টাকার দাবি করেন। তারপরে আর আলোচনা এগোয়নি বলে বাসিন্দাদের দাবি। এ দিকে, বাওকালি জোতের বাসিন্দা অনিচ্ছুক জমিদাতারা সাফ জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ বেশি পেলে তাঁদের জমি দিতে কোনও আপত্তি নেই। এলাকার বাসিন্দা গফুর আলি প্রথম পর্যায়ে ক্ষতিপুরণের টাকাও নিয়েছেন। তাঁর দাবি, “যে হারে ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয়েছে, তা বাজারদরের থেকে অনেক কম। সে কারণে বেশি দর চেয়েছি। কিন্তু প্রশাসন আর কোনও আলোচনা করছে না।”
কৃষক অনিল রায়, মুকুন্দ সিংহরা বলেন, “এলাকার সাতটি পরিবার এখনও ক্ষতিপূরণ নেয়নি। আমাদের জমি ছাড়তে কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু ক্ষতিপুরণের অঙ্ক বাড়াতে হবে। আমাদের দাবি যে মানতে হবে তার কথা নেই, আলোচনাতে সবই সম্ভব।” দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রচনা ভগত বলেন, “প্রক্রিয়া চলছে। অনিচ্ছুকরা চাইলে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy