Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘পা সোজা করলেই অন্যের মুখে লাগবে যে!’

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগে এমনই গাদাগাদি করে রাখা হয় মা এবং সদ্যোজাতদের। গত সপ্তাহে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে এ ভাবে চাপাচাপি করে শুয়ে থাকার সময়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এক সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। 

ঠাসাঠাসি: জলপাইগুড়ি হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগে। নিজস্ব চিত্র

ঠাসাঠাসি: জলপাইগুড়ি হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগে। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায় 
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

মিনিট কয়েকও হয়নি, ওটি থেকে বিছানায় শোয়ানো হয়েছে অনিতা সরকারকে। সবে মাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। হঠাৎই হাসপাতালের মহিলা কর্মী এসে অনিতাকে পা ভাঁজ করে শুতে নির্দেশ দেন। তার পরে নীচের দিকে আরেক মহিলাকে শুইয়ে দেন। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল অনিতার। কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “পা ভাঁজ করে শুতে পারছি না, খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পা সোজা করলে তো আরেক জনের মুখে লাগবে।”

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগে এমনই গাদাগাদি করে রাখা হয় মা এবং সদ্যোজাতদের। গত সপ্তাহে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে এ ভাবে চাপাচাপি করে শুয়ে থাকার সময়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এক সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।

শুক্রবার দুপুর একটা। গনগনে রোদে বাইরে গাছের পাতাও নুয়ে পড়েছে। হাসপাতালের মা ও শিশু ওয়ার্ডে যেখানে মাথার উপর পাখা নেই, সেই রোগীদের ঘেমে নেয়ে একশা দশা। একটি ছোট বিছানায় শিশু কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন রূপা রায় দাস। গত পরশু দিন কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। কোলে মেয়েটি অঝোরে কাঁদছে। মা ঘেমেই চলেছেন। তিনি বসে রয়েছেন, কারণ ওই বিছানাতেই পাশে আরেক জন রোগী শুয়ে আছেন। সদ্য মা হওয়া রূপা বললেন, “এক বিছানায় তিন জন মা এবং তিন জন শিশু। মোট ছ’জন। গরমে সকলে হাঁসফাঁস। এক জন মা বিছানায় শুলে আরেক জন মাকে বসে থাকতে হয়। আর তৃতীয় মাকে বিছানা থেকে নেমে পায়চারি করতে হয়।”

পাশের একটি বিছানায় দেখা গেল, তিনটি শিশুকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। বিছানায় থাকা দু’জন মহিলা পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লিপিকা দাসের কথায়, ‘‘এইটুকু তো বিছানা। বাচ্চাগুলো শুলে আমাদের জায়গা থাকে না। এখন ওরা ঘুমোচ্ছে, আমরা বসতে গেলেই গাদাগাদি হবে। ওদের ঘুম ভেঙে যাবে। তাই কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে আছি।’’

জেলা হাসপাতালে সাধারণ (নর্মাল) প্রসব এবং সিজার প্রসবের মা-শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে। একটি ওয়ার্ডে বিছানা রয়েছে ৭০টি, অন্যটিতে ৭১টি। এ দিন দুপুরে একটি ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিল ১১০, অন্যটিতে ৯০। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়াতেই এক বিছানায় একাধিক রোগীকে রাখতে হচ্ছে। জেলা হাসপাতালে মা ও শিশু ছাড়া অন্য সব ওয়ার্ড সুপার স্পেশ্যালিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলিতে মা ও শিশুদের সাময়িক রাখার ব্যবস্থা করলে এই দুর্ভোগ লাঘব হত বলে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও একাংশের দাবি। পরিস্থিতি দেখে সামর্থ না থাকলেও অনেকে রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এক রোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ‘‘জেলা হাসপাতালে একের পর এক ওয়ার্ড ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে মা-শিশুদের রাখা হলে আরও গরিব মানুষ পরিষেবা পেতে পারতেন।’’ হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘সমস্যাটি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সে অনুমতি পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri state Hospital Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE