দূরে: বাংলাদেশে হিলি স্টেশন। ভারতের হিলি থেকে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মাত্র হাত দশেক দূরে হিলি স্টেশন। চোখের সামনে দিয়ে দিনরাত ট্রেন ছুটে চলছে। অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে ওই স্টেশন। ট্রেনে উঠতে পারেন না দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বাসিন্দারা। কারণ, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হিলিকেও ভাগ করে দিয়েছে। যা আয়তন ছিল অখণ্ড হিলির, তার বেশির ভাগই বাংলাদেশের সীমানায় চলে গিয়েছে। আস্ত রেল স্টেশনও ওদিকে।
এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘বুঝলেন, ওই ট্রেন ছুঁয়ে যায় আমার ফেলে আসা দেশ। তাই ট্রেনটাকেই ছুঁতে ইচ্ছে করে। দেশভাগ যে কত বড় যন্ত্রণা, রোজ ওই ট্রেনের শব্দ মনে করিয়ে দেয়।’’
দেশভাগের আগে হিলি ছিল অবিভক্ত বাংলার এক বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র। সে সময় হিলি দিয়ে যেত দার্জিলিং মেলও। বালুরঘাটের মানুষ মাত্র ৬ ঘন্টায় কলকাতা পৌঁছতেন। হিলির প্রবীণ বাসিন্দা অমূল্যরতন বিশ্বাসের কথায়, ‘‘সকালের ট্রেনে চেপে সোজা শিয়ালদহে পৌঁছে বিয়ের বাজার সেরে ফিরতি ট্রেন ধরে রাতের মধ্যে হিলি পৌঁছনো যেত।’’
বাসিন্দারা দাবি করেন, হিলি-সান্তাহার-দর্শনা-ঈশ্বরদি-হার্ডিঞ্জ ব্রিজ-ভেড়ামারা-রানাঘাট-শিয়ালদহ সাবেক ওই রেলপথ এখনও রয়েছে। দর্শনা ও গেদে পর্যন্ত ট্রেনও চলাচল করে। ওই রেলপথ দিয়েই এক সময় শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, অসম থেকে মেঘালয় থেকে সহজে কলকাতা যাতায়াত করা যেত। কলকাতার সঙ্গে ওই সহজ যোগাযোগের হাত ধরেই হিলিতে গড়ে উঠেছিল বড় বড় চালকল, পাটকল, বিড়ি তৈরির কারখানা, বস্ত্র বিপণির সম্ভার, ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি।
দেশভাগের পর ওই রেলপথ বাংলাদেশের মধ্যে চলে গিয়েছে। ফলে এই হিলি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় চালকল, পাটকল বিড়ি তৈরির বড় কারখানা। হিলির শিক্ষাবিদ হিমাংশু সরকার বলেন, ‘‘হিলি-বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয় পর্যন্ত করিডর চালু করে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নতি সম্ভব। মেঘালয়ের জেলা সদর তুরা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। তুরা থেকে মহেন্দ্রগঞ্জ হয়ে ভায়া বাংলাদেশের হিলি, রেল পথ দিয়ে কলকাতার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে প্রায় ৯০০ কিলোমিটারে।’’
একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট-হিলি থেকে বাংলাদেশের হিলি রেলপথ দিয়ে জয়পুরহাট—দর্শনা হয়ে শিয়ালদহ পৌঁছতে পাড়ি দিতে হবে মোটে ৩০০ কিলোমিটার। যা যাওয়া যেতে পারে মাত্র ৫ ঘণ্টায়। বর্তমানে হিলি থেকে কলকাতার দূরত্ব কিন্তু প্রায় ৪৮৭ কিলোমিটার। সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। দেশভাগের পরে বাংলাদেশের দিকে বন্ধ হয়ে পড়া এই রুটটি চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন হিলির নাগরিকরা।
স্বাধীনতা আন্দোলনেও হিলির অবদান রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঝড় সামলেছে। আর স্বাধীন ভারতে হিলি অনুন্নত, প্রান্তিক অঞ্চল হয়ে সুদিনের অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy