মালদহের সভায় বক্তৃতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ করে ফেরার সময় হেলিকপ্টারে ওঠার আগে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর নেতাদের বলে গিয়েছিলেন, বিবাদ মেটাতে হবে। মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
কিন্তু দলনেত্রীর সেই কথাকে যে কেউ মর্যাদা দেননি, তার প্রমাণ পরে বারবারই পাওয়া গিয়েছে। বুধবার বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করার সময় সেই বিবাদ মিটে গিয়েছে এমন চিত্র সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন জেলায় দলের ১২ জন প্রার্থীকেই এক সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত করে। মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সাবিত্রী মিত্র। তারপর এক জনকে বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। কিন্তু সভা মিটে যাওয়ার পরে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।
তবে তার আগেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, মমতার সভায় লোকের ভিড় কম হওয়া নিয়ে। এ দিন মমতার সভায় হাজার পাঁচেক তৃণমূল কর্মীর ভিড় হয়েছিল। কিন্তু এর আগে এই একই জায়গায় সভায় আরও অন্তত হাজার দুই বেশি কর্মীর ভিড় হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রেই খবর। এ দিন কেন ভিড় কম হল?
বিরোধীদের দাবি, মালদহ এমনিতেই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি, এখানে তৃণমূল পায়ের তলার জমি হারাচ্ছে বলেই খোদ দলনেত্রীর সভা নিয়েও উৎসাহের অভাব ছিল। মমতার এ দিন দুপুর ২টোর সময় সভা করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সভা শুরু করেন বিকেল ৪টে-তে। তখনও মাঠের গ্যালারি ভরলেও ফাঁকা রয়েছে অন্য অংশ। বিরোধীদের দাবি, কথা ছিল মমতা হেলিকপ্টারে করে শহরের কাছে নেমেই সোজা সভাস্থলে চলে যাবেন, কিন্তু মাঠ ভরেনি শুনেই তিনি হোটেলে চলে যান। পরে মাঠের কিছুটা অংশ ভরেছে শুনে তিনি সভাস্থলে আসেন।
তবে তৃণমূল জানিয়েছে, এ সব দাবিই ভিত্তিহীন। মমতা শহরে এসেইছেন বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ। তারপরে সভাস্থলে আসতে আসতে চারটে বেজে গিয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও কারণ নেই। আর ভিড় কম হওয়ার পিছনে তৃণমূল দু’টি কারণ দেখিয়েছে। একটি হল, মাত্র দু’দিন আগে এই সভার কথা ঘোষণা হওয়ায় কেবল ইংরেজবাজার এলাকা ও তার আশপাশ থেকেই কর্মী সমর্থকেরা আসতে পেরেছিলেন। বাকি জেলা থেকে কর্মী সমর্থকেরা ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণটি হল, এ দিন প্রচণ্ড রোদ থাকায় অনেক প্রবীণ ও মহিলারা সভাস্থলে আসতে পারেননি। তবে তাতে মমতার সভায় ভিড় কম হওয়ার প্রসঙ্গে শোরগোল কমছে না। অভিযোগ উঠেছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই মালদহে তৃণমূল নেতৃত্ব এককাট্টা হয়ে কোনও কাজ করতে পারে না।
মুকুলবাবু ও শুভেন্দুবাবু এ দিন জেলায় দলের সব নেতাদের নিয়েই বৈঠকে এককাট্টা হয়ে কাজ করারই কথা বলেছেন বলে দল সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ইংরেজবাজারের কালীতলায় তৃণমূলের কার্যালয়ে সেই বৈঠকের পরে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় নেই। আমরা সকলেই দলের সৈনিক। আমরা জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করে মালদহের ১২টি আসনেই জয় লাভ করব। এই বার্তাই এদিন দলের প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে।’’ এই বৈঠকটি নিয়ে দলের সব অংশেই রীতিমতো উৎসাহ ছিল। ভিড় ছিল দলের কার্যালয়ের বাইরে। সকলেই জানতে চাইছিলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কী বার্তা দেন দলের দুই শীর্ষ নেতা।
দলের একাংশ জানিয়েছে, মালদহে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ছে। এখন জেলাতে তৃণমূলের চারটি গোষ্ঠী। রাজ্যের দুই বিদায়ী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর গোষ্ঠী এবং জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ও কোতুয়ালি পরিবারের অন্যতম সদস্য আবু নাসের খান চৌধুরীর গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই দুই পুরসভা দখল করলেও লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে।
এ বার মালদহে বেশ কিছু আসনে তৃণমূল নতুন মুখের উপরে ভরসা করছে। এই প্রার্থীদের দাবি, জেলার প্রথম সারির নেতানেত্রীরা কেবল নিজেদের এলাকায় প্রচার করছেন। কিন্তু তাঁরা নতুনদের কেন্দ্রে আসছেন না। রাজ্য নেতারা যে কথা শোনার পরে জানিয়ে দেন, জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। একে অপরের প্রচারে যেতে হবে। সেই প্রচারে গিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে। মানুষকে তৃণমূলের প্রতি আস্থা রাখার কথা বলতে হবে। এই ভাবে জোটবদ্ধ ভাবে লড়াই করে এবারের বিধানসভায় ভালো ফল করতে হবে বলে নির্দেশ দেন ওই দুই নেতা। তবে এখন দেখার বৈঠকের পরেও জেলাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে একে অপরে প্রচারে কতটা ঝাঁপিয়ে পড়েন জেলার প্রথম সারির নেতারা।
মমতা এ দিন মালদহেরই একটি হোটেলে রাতে থাকবেন। তবে এ দিন শহরে থাকলেও আলাদা করে কারও সঙ্গে বৈঠক করেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy