Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কে আছে মুশহরও

নতুন নাগরিকত্ব আইনে মুশহর সম্প্রদায়ের মানুষের চোখমুখে আতঙ্ক। 

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মেহেদি হেদায়েতুল্লা 
ডালখোলা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৬
Share: Save:

ওঁরা এক সময়ে থাকতেন বিহারে। বন্যার কবলে নিঃস্ব হয়ে সেখান থেকে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। ডালখোলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মুশহরটোলায় থাকেন এই মুশহর সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এখন নতুন নাগরিকত্ব আইনে এই শহরের ছোট্ট পাড়ায় বাসিন্দাদের চোখমুখে আতঙ্ক।

শহরের এক কোণে এক ফালি ফাঁকা জমিতে বসবাস। সরু ঢোকার পথ, টিনের চাল আর বাঁশ দিয়ে প্লাস্টিক মোড়া ছোট ছোট খুপরি ঘর। শৌচাগার বেহাল। যেখানে সেখানে আবর্জনা। কোনও রকমে খাট বসালে ঘরের জায়গা শেষ। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। এমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয় একশো পরিবারকে। এখনও সব ঘরের ছেলেমেয়ে স্কুলেও যায় না। রাত থাকতে উঠে কাজ করতে যান স্টেশনে। কেউ যান শহর থেকে দূরে খেতমজুরের কাজ করতে। দিন আনি দিন খাই করে চলে তাঁদের জীবন। সেখানে এত নথির জায়গা কোথায়, প্রশ্ন এখন মুশহরদের মুখে মুখে।

এই পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা ফকিরা ঋষি বলেন, ‘‘সরকারি তফসিল মোতাবেক মুশহররা মহাদলিত শ্রেণির মানুষ। কার্যত পিছড়ে বর্গের পিছড়ে বর্গ। উত্তর-বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে এঁদের বসবাস। বিহারে বন্যায় মাথার উপর চাল হারিয়ে কাজের সন্ধানে এই রাজ্যে আসা আজ থেকে ৩০ বছর আগে। তার পর ভোটার কার্ড,আধার কার্ড হয়েছে। কিন্ত জমির কোন নথি নেই।’’

এই শহরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক পরিতোষ বিশ্বাস জানান, ‘‘মুশহরদের অধিকাংশই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জীবিকার কোনও স্থায়ী সংস্থান নেই, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো তো অনেক দূরের কথা।’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই মানুষেরা কী জানবেন নতুন নাগরিক আইন সম্পর্কে?

সুমন ঋষির মুখেও একই প্রশ্ন, কী এই আইন? তিনি শহরের একটি গুদামে মাল ওঠান-নামান। সেখানে বড়বাবুদের মুখে শুনেছেন, ‘দস্তাবেজ না দেখাতে পারলে দেশছাড়া হতে হবে।’ এতেই আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভায় আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘরের আবেদন করি। জমির দস্তাবেজ না থাকায় ঘর পাইনি। দস্তাবেজ তো বিহারের বন্যায় হারিয়ে গিয়েছে। তা হলে এখন কী হবে? আমাদের কি ফের ভিটেছাড়া করা হবে?’’

ডালখোলা পুরসভার যুগ্ম প্রশাসক সুভাষ গোস্বামী বলেন, ‘‘খুব ধীরে হলেও মুশহর সম্প্রদায় সমাজের মূল স্রোতে আসছে। বিপিএল কার্ড হয়েছে, রেশন পাচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন ওঁরা।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে এসেছিলেন অনেকে। আমি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি ওঁদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Musahar CAA Dalkhola
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE