Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়

হোটেলেই থাকতে হচ্ছে উপাচার্যকে

ভাল বাড়ি নেই, হোটেলের ঘর ভাড়া করেই থাকতে হচ্ছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। এক-দু’দিন নয়, মাসের পর মাস ধরে কোচবিহার বিশ্ব সিংহ রোডের একটি অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া করে থাকছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

ভাল বাড়ি নেই, হোটেলের ঘর ভাড়া করেই থাকতে হচ্ছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। এক-দু’দিন নয়, মাসের পর মাস ধরে কোচবিহার বিশ্ব সিংহ রোডের একটি অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া করে থাকছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শহরের বাড়ির খোঁজ করা হয়েছে। কিন্তু ভাল বাড়ি পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অতিথি নিবাস রয়েছে। সেটিও ভাড়াতে রয়েছে। সেখানে অতিথিরাই থাকেন। সেখানে উপাচার্যের থাকার জন্য আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা নেই।

শিক্ষক ও ছাত্রদের একটি অংশ অবশ্য অভিযোগ তুলেছেন, উপাচার্য বেশিরভাগ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির থাকেন না। সে কারণেই হোটেলের ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য শ্যামল রায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অমল হোড় জানিয়েছেন, উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তিনি শুধু বলেন, “কোথাও কোনও অনিয়ম হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “উপাচার্য যে ধরনের সুবিধে পান, তাতে একটি হোটেলের ঘর ভাড়ায় রাখা যেতেই পারে। তাতে খরচ খুব সামান্য হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি একা থাকবেন বলেই হোটেলে থাকতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক অবশ্য বলেন, “উপাচার্যর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি থাকে। অনেক সময় যেখানে থাকছেন, সেখানে ওই সব নথি নিয়েও যেতে হয় তাঁকে। যেখানে থাকছেন, সেখান থেকে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজই করতে হয়। ফোনও করতে হয়। অনেকে তাঁর সঙ্গে সেখানে দেখা করতেও যেতে পারেন। তাই উপাচার্য বেসরকারি হোটেলে থাকলে সমস্যা। হোটেল তাঁর মতো পদাধিকারীর পক্ষে কখনওই উপযুক্ত নয়।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, মাসে ১২ হাজার টাকায় হোটেলে ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “ওই হোটেলে চারশো টাকা দিনে রুম ভাড়া পাওয়া মানে অনেক বড় ব্যাপার।” ওই হোটেলের মালিক রাজু ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুম ভাড়ার কথা স্বীকার করে নিলেও তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে পুণ্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিল্ডিংয়ে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন ইন্দ্রজিৎ রায়।

তিনি বেশিরভাগ সময় শিলিগুড়ি থেকে যাতায়াত করতেন। মাস খানেকের জন্য কোচবিহার শহরে তাঁর জন্যেও একটি হোটেল ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিছু দিন পরে অবশ্য তিনি সরকারি একটি অতিথি নিবাসে থাকার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সময় লাগবে। সে কারণেই সে সময় প্রথমদিকে হোটেল এবং সরকারি অতিহি নিবাসে থেকেছি। বর্তমান বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”

তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আসেন শুভ্রাংশুশেখর চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় কোচবিহার শহরের কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। তিনিও দিন কয়েক হোটেলে ছিলেন। পরে একটি বাড়ি ভাড়া নেন। তিনি বলেন, “ভাড়া বাড়ি নিয়ে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেছি।”

বর্তমানে স্থায়ী পরিকাঠামো বলতে একটি দ্বিতল ভবন। সেখানেই ক্লাস ঘর ও অফিস ঘর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তার বাইরে আলাদা করে কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “একজন উপাচার্য যা সুবিধে পান, তাতে একটি হোটেলের ঘর ভাড়া করে থাকা কোনও বিষয় নেই। বরঞ্চ তাতে বিশ্ববিদ্যালের সাশ্রয় হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘উপাচার্য বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন না। কিন্তু শহরে থাকলেও উপাচার্য হোটেলে থাকছেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vice Chancellor Panchanan Barma University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE