পি সি চন্দ্র মুগ্ধা নিবেদিত আনন্দবাজার পত্রিকা অদ্বিতীয়ার গ্র্যান্ড ফিনালের বিজয়িনীরা। (বাঁ দিক থেকে) চন্দ্রতপা ভট্টাচার্য (সঙ্গীত), বীণাশ্রী ঘোষ (নৃত্য), রিনিক্তা দাশগুপ্ত (আবৃত্তি)। শনিবার কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
গোটা রাজ্যকে পিছনে ফেলে এ যেন উত্তরবঙ্গের জয়। গানে, নাচে, আবৃত্তিতে।
আরও নির্দিষ্ট করে বললে এ জয় মূলত শিলিগুড়ির। উত্তরবঙ্গের অলিখিত রাজধানী শহর বরাবর বাণিজ্যনগরী হিসেবেই পরিচিত। সেখানকারই ‘তিনকন্যা’ এ বার গোটা রাজ্যেকে দেখিয়ে দিলেন— সংস্কৃতি জগতেও এগিয়েছে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গ।
গত শনিবার কলকাতার কলামন্দিরে পি সি চন্দ্র মুগ্ধা নিবেদিত আনন্দবাজার পত্রিকা ‘অদ্বিতীয়া’র গ্র্যান্ড ফিনালে-র তিন বিজয়িনীই উত্তরবঙ্গের, শিলিগুড়ির। কয়েক মাস ধরে একের পর এক ধাপ, বাছাই-পর্ব পার হয়ে এগিয়েছেন প্রতিযোগীরা। সেখান থেকে চূড়ান্ত পর্বে যোগ দিয়ে দাপট দেখাল উত্তরবঙ্গ। গানে চন্দ্রতপা ভট্টাচার্য, আবৃত্তিতে রিনিক্তা দাশগুপ্ত এবং নাচে বিনাশ্রী ঘোষ পেলেন সেরার শিরোপা।
পড়াশোনা, সংসার, কাজ— এ সবের মধ্যেও ভাল লাগার এবং ভালবাসার জায়গা হিসাবে ওঁরা ছোটবেলা থেকেই সঙ্গে রেখেছিলেন গান, নাচ বা আবৃত্তিকে। কখনও বাধা এসেছে, তা অতিক্রমও করেছেন। পরিজনেরা পাশে থেকে জুগিয়েছেন সাহস, অদম্য মানসিকতা। তাই সেই তিনকন্যা রোজনামচার ফাঁকেও আকড়ে রেখেছেন নিজেদের সেই ভালবাসাকে। ‘অদ্বিতীয়া’র মঞ্চে এমন সাফল্য বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের আত্মবিশ্বাস।
কলকাতার কলামন্দিরে ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র ও সৌমিলি বিশ্বাস। প্রতিযোগীদের ‘পারফরম্যান্স’ দেখেই শ্রোতাদের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত ছিলেন বিচারকেরাও। সাফল্যের ২৪ ঘন্টা পরেও রবিবার তিন বিজয়িনীই বলছেন— ‘‘চাকরি, পড়াশোনা যাই করি, গান, নাচ ও আবৃত্তিতে নিয়েই সারা জীবন থাকব। অদ্বিতীয়া এগিয়ে দিল অনেকটাই।’’
গানে প্রথম হয়েছেন চন্দ্রতপা। শিলিগুড়ির পূর্ব বিবেকানন্দপল্লির মেয়ে। রবীন্দ্রভারতী থেকে এমএ করার পরে এখন কলকাতায় গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৯ বছর ধরে গান শিখছেন, করছেন চন্দ্রতপা। মার্গসঙ্গীত দিয়ে শুরু করে এখন সব রকম গানই করেন। মা পলি ভট্টাচার্য বরাবর মেয়েকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বাবা ভাস্কর ভট্টাচার্য কৃষি বিপণন দফতরের কর্মী। মেয়ের সাফল্যে খুশি দু’জনেই। চন্দ্রতপার কথায়, ‘‘ঠাকুমা শঙ্করী ভট্টাচার্যের কোলে বসে তিন বছর বয়সে গান করেছিলাম। সেই শুরু। বর্ণালী বসু এবং বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদারের কাছে শিখছি। গোটা রাজ্যে প্রথম হতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আগামীতে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।’’
চন্দ্রতপার মতোই তিন বছর বয়স থেকে আবৃত্তি করেন রিনিক্তা দাশগুপ্ত। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম করার পরে এখন বিএড করছেন। চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। কিন্তু কোনও সময়ই ভুলে থাকেননি আবৃত্তিকে। বাবা বিবেক দাশগুপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। মা মৌসুমী দাশগুপ্ত গান করেন, গানের স্কুলও চালান। রিনিক্তা দুরদর্শন এবং আকাশবাণীতে ঘোষিকা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অমিতাভ ঘোষের কাছে আবৃত্তি শিখেছি। শহরের উত্তাল নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে নাটকও করি। মা বাবা সবসময়ে পাশে থেকেছে। সাহস দিয়েছেন। তাই অদ্বিতীয়ার মঞ্চে সফল হতে পেরেছি।’’
নাচই জীবন বিনাশ্রী ঘোষের। শিলিগুড়ির সুকান্তপল্লি লেকটাউনের বাসিন্দা তিনি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তিনি জানান, আট বছর বয়স থেকে সঞ্চিতা চক্রবর্তীর কাছে নাচ শিখছেন। বাবা নারয়ণচন্দ্র ঘোষ এক সময় পছন্দ করতেন না মেয়ের নাচের প্রতি আকর্ষণকে। কিন্তু মা গীতশ্রী ঘোষ সব সময় উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। পরে মেয়ের প্রতিভা বুঝতে পেরে আর কখনও ‘না’ করেননি বাবাও। বিনাশ্রীর কথায়, ‘‘জীবনে আর যাই করি। নাচ ছেড়ে বাঁচতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy