Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আড়াই বছর আগের আতঙ্কের স্মৃতি ফিরল উত্তরে

পায়ের তলায় মাটি কাঁপছিল। ফিরে এসেছিল আড়াই বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি। ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিলেন মালদহ, শিলিগুড়ি, কোচবিহারের মানুষজন। এই কম্পন তাঁদের চেনা। ২০১২-র সেপ্টেম্বরে ভয়াল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল সিকিম-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। শনিবারের ভূমিকম্প সেই আতঙ্কই ফিরিয়ে আনল উত্তরবঙ্গে।

এ ভাবেই ভেঙেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি বাড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এ ভাবেই ভেঙেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি বাড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

পায়ের তলায় মাটি কাঁপছিল। ফিরে এসেছিল আড়াই বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি। ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিলেন মালদহ, শিলিগুড়ি, কোচবিহারের মানুষজন। এই কম্পন তাঁদের চেনা। ২০১২-র সেপ্টেম্বরে ভয়াল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল সিকিম-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। শনিবারের ভূমিকম্প সেই আতঙ্কই ফিরিয়ে আনল উত্তরবঙ্গে।

ক্ষয়ক্ষতির বহর সে বারের মতো না হলেও প্রাণহানি এড়ানো যায়নি। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। একটু সময় নিয়ে তাঁকে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাব।’’ তিনি জানান, রাজ্যে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নকশালবাড়িতে রূপবান খাতুন, জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে মংলু রায় এবং এক রাজমিস্ত্রি।

আজ, রবিবার মৃত ও আহতদের পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার রাতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব এস সুরেশ কুমার রওনা দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, সাত জেলায় অন্তত শ’পাঁচেক মানুষ কমবেশি আহত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারি বাড়ি ও সেতুর কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে এইচআরবিসি, পূর্ত দফতর, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। বেসরকারি বাড়িঘরের ক্ষতি হয়ে থাকলে তা-ও সরকারকে জানানো যাবে। একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। তার নম্বর ১০৭০ এবং ২২১৪৩৫২৬। মুখ্যমন্ত্রী জানান, নিয়ম মেনে মৃতের পরিবার ও আহতেরা সরকারি ক্ষতিপূরণ পাবেন।

বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘর বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। থরথর কাঁপতে থাকে বাতিস্তম্ভ। বহুতলগুলিকে দুলতে দেখে আতঙ্ক বেড়ে যায়। রাজগঞ্জে ডাঙাপাড়া এলাকায় তিনতলা বাড়ি তৈরির কাজ করার সময়ে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান রাজমিস্ত্রি মংলু রায় (৪২)। তাঁর সঙ্গীরা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সব শেষে মংলু বেরোতে গিয়ে চাপা পড়েন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। নকশালবাড়িতে ছাদ ধসে পড়ে মারা যান বছর বিয়াল্লিশের রূপবান।

জলপাইগুড়ি শহরের নদী-পুকুরে জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। করলা নদীতে বড় ঢেউ ওঠে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে একই মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রথম বারের কিছু পরেই আফটারশকও অনুভূত হয়। নেপালে অন্তত ১৭টি আফটারশক হলেও, উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে একটিই হয়েছে। এই এলাকায় কমপক্ষে ৯ সেকেন্ড কম্পন অনুভূত হয়।’’

শিলিগুড়িতেও একাধিক জায়গায় ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। শাস্ত্রীনগরে পাঁচিল ধসে জখম হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রেম সাহা। প্রধাননগর এলাকায় একটি বাড়ির ঝুলবারান্দা ভেঙে পড়ে। সেখানেই অপর একটি নবনির্মিত বহুতল হেলে যায়। চম্পাসারিতে বাড়ির পাঁচিল ভেঙে চাপা পড়ে এক বৃদ্ধা জখম হন। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে মাটিগাড়ার একটি শপিং মল লাগোয়া এলাকাতেও কয়েকজন আহত হন। জখম বা আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত ৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি ২০ জন। এর মধ্যে ১৭ জন মহিলা। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, চার জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই হাসপাতালে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, হাসপাতালে যাঁরা রয়েছেন, রাজ্য সরকার তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে। নার্সিংহোমে কেউ ভর্তি রয়েছেন কি না তাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

ভূমিকম্পের জেরে কোচবিহার শহরের বিশ্বসিংহ রোডেও একটি নার্সিংহোমের একাংশ ভেঙে পড়ে। একটি বহুতলেও চাঙড় খসে পড়েছে। শহরবাসীর অভিযোগ, নতুনবাজার থেকে নতুনপল্লি, মরাপোড়া চৌপথী থেকে রেলঘুমটি চৌপথী এলাকায় পরপর বহুতল তৈরি হচ্ছে। কেউ বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছে না। একাধিক নির্মাণ কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠলেও পুরসভা তা কানে তোলেনি। শিলিগুড়িতেও বহুতল-বিধি মানা হচ্ছে না বলে ফের অভিযোগ উঠেছে।

আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম স্কুলের তিনতলার উপরে বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। মালদহের কালিয়াচকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে সিঁড়ির রেলিং ভেঙে জখম হয় সুজাপুর নই মৌজা হাইস্কুলের ৩৫ জন পড়ুয়া। একই ভাবে জেলার আরও দু’টি স্কুলের ১৫ জন আহত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE