উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে ক্যাম্পাসে আউটপোস্ট তৈরি-সহ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তরফে চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সাড়া না পেয়ে হতাশ পুলিশকর্তারা। কেননা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি থেকে ক্যাম্পাসে কোনও গোলমাল ঘটলে, পুলিশকেই সমস্যা মেটাতে যেতে হয। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-সহ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, সে কারণেই নিরাপত্তা ঠিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সাড়া না-দেওয়ায় পুলিশের তরফেও কিছু করা সম্ভব হয়নি।
সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের অংশে মদের আসর, আপত্তিকর কাজকর্ম চলে বলে অভিযোগ। বহিরাগতরা অবাধে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে বলেও অভিযোগ। গত এক সপ্তাহে একাধিক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢিলেঢালা নিরাপত্তার বিষয়টি ফের সামনে এসে পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক সকল স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এমনকী স্থানীয় থানার পুলিশ আধিকারিকদেরও কমিটির মধ্যে রাখতে চান তাঁরা। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার চেলিং সেমিক লেপচা বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বছর খানেক আগে লিখিত আকারে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দেননি। ফলে পুলিশের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয়নি। ফের ওই প্রস্তাবগুলি লিখিত আকারে কর্তৃপক্ষকে আরও এক বার জানানো হবে।’’
পুলিশ কমিশনারেট এবং মাটিগাড়া থানা সূত্রেই জানা গিয়েছে, চার দফা ওই প্রস্তাবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আউটপোস্ট করার কথা রয়েছে। তাতে ২৪ ঘন্টা ক্যাম্পাসে পুলিশ থাকতে পারবে। কখনও কিছু ঘটলে চটজলদি তাঁরা ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ক্যাম্পাসে নজরদারি, টহল দেওয়ার কাজও সহজ হবে। আউটপোস্ট তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তরফে জায়গা চাওয়া হয়েছে। জায়গা দিয়ে পুলিশের তরফেও আউটপোস্টের পরিকাঠামো তৈরি করে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু জায়গা না মেলায় পুলিশের তরফে সেই কাজ করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘আউটপোস্ট করতে পুলিশের তরফে জায়গা চাওয়ার বিষয়টি কর্ম সমিতির সভায় আলোচনা চলছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কর্ম সমিতির সভায় পাশ হলে তবেই আউট পোস্ট তৈরির কাজ করা সম্ভব হবে।’’
অন্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের সীমানা পাঁচিলের বিভিন্ন অংশ ভেঙে লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন। অবৈধ এবং নজরদারিহীন ওই সমস্ত যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, বহিরাগতদের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে হবে।
সম্প্রতি ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার পর সিসি ক্যামেরা বসানো, অবৈধ গেটগুলি বন্ধ করা, বহিরাগতদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরাও। উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা বসাতে একটি সরকারি সংস্থা সমীক্ষা করে গিয়েছে। ওই কাজ করা হবে। তবে লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশ ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করেন। গেট বন্ধ করার ক্ষেত্রে তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের ক্ষোভ থাকে। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হলে তাদের দেড় দুই কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হবে বলে দাবি। যে কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তারা সমস্যা মেটাতে কী করা উচিত, তা নিয়ে রিপোর্ট দিলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy