Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কী জ্বর, বলছে না কেউই

জ্বর নিয়ে দু’দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন সারিকুল ইসলাম। রক্ত পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, ইটাহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসক নিয়মিত দেখতে আসছেন না। কী হয়েছে, সঠিক ভাবে কেউ বলছেন না দেখে মঙ্গলবার তিনি স্যালাইনের চ্যানেল নিজেই হাত দিয়ে টান মেরে খুলে ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যান। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সারিকুলের ম্যালেরিয়া হয়েছে। প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স-এর সংক্রমণে আক্রান্ত তিনি। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

শঙ্কিত: আত্মীয় ভর্তি রায়গঞ্জ হাসপাতালে। জ্বরের কারণ জানতে না পেরে চিন্তায় পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শঙ্কিত: আত্মীয় ভর্তি রায়গঞ্জ হাসপাতালে। জ্বরের কারণ জানতে না পেরে চিন্তায় পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

গত শনিবার জ্বর নিয়ে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনন্ত বৈদ্য। তাঁর রক্ত পরীক্ষা হলেও রিপোর্টে কী লেখা, তা জানতে পারছেন না পরিবারের লোকেরাও। জিজ্ঞাসা করলে বলা হচ্ছে, ‘ভাল আছে। খারাপ কিছু মেলেনি।’ অথচ জ্বর সারছে না।

একই দিনে ভর্তি হয়েছিলেন জ্যোৎস্না চৌধুরী। জ্বরে আক্রান্ত তাঁরও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে কী মিলল, তা জানানো হচ্ছে না হাসপাতালের তরফে। পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা জিজ্ঞেস করলে নার্স, আয়ারা জানান শুধু ডাক্তার রিপোর্ট দেখবেন। আর কাউকে জানানো হবে না।

জ্বর নিয়ে দু’দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন সারিকুল ইসলাম। রক্ত পরীক্ষা হয়। অভিযোগ, ইটাহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসক নিয়মিত দেখতে আসছেন না। কী হয়েছে, সঠিক ভাবে কেউ বলছেন না দেখে মঙ্গলবার তিনি স্যালাইনের চ্যানেল নিজেই হাত দিয়ে টান মেরে খুলে ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যান। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সারিকুলের ম্যালেরিয়া হয়েছে। প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স-এর সংক্রমণে আক্রান্ত তিনি। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এসে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা মিলছে না দেখে সকলেই হতাশ। প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে অন্তত ১০-১২ জন ভর্তি হচ্ছেন। অথচ কী হয়েছে, চিকিৎসক, নার্সদের বারবার জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর পাচ্ছেন না পরিবারের লোকেরা। মিলছে ধমক, খারাপ ব্যবহার। হাসপাতালের সুপার গৌতম মণ্ডল অবশ্য বলেছেন, ‘‘এমন কোনও ব্যাপার নেই। এই জাতীয় অভিযোগও কেউ করেননি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

হাসপাতালে ভর্তি জ্বরে আক্রান্ত এর রোগিণীর আত্মীয় জয়দেব বর্মনের অভিযোগ, ডাক্তার-নার্স কেউই কিছু বলছেন না, উল্টে ধমক দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘পাছে রোগীর চিকিৎসায় তার প্রভাব পড়ে সেই ভয়ে আমরাও চুপ করে রয়েছি।’’ রোগী অনন্ত বৈদ্য জানান, তাঁর কাছের শয্যায় ভর্তি ছিলেন জ্বরে আক্রান্ত সারিকুল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসক আসছে না দেখে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ তিনি নিজেই বাড়ি চলে যান। যদিও এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত ২৩ জুন হাসপাতালে ভর্তি এক ছাত্রীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। রায়গঞ্জ শহরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি মেসে ভাড়া থাকেন। বাড়ি কুশমন্ডিতে। তবে জ্বর নিয়েই বাড়ি গিয়েছিলেন। ইদের পর জ্বর নিয়েই ফিরে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে সেই খবর বাইরে প্রকাশ হওয়ায় হাসপাতালের সুপারকে শোকজ করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। এর পর থেকেই জ্বর নিয়ে মুখে কুলুপ সকলের। উঠেছে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও। যদিও হাসপাতালের লোকজন এই নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। তবে একটি অংশের দাবি, এক দিকে উপরমহলের চাপ, অন্য দিকে রোগীর পরিবারে। মাথা ঠান্ডা রাখা কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panic Fever Unknown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE