Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শাসকের দাপট নেই, পুনর্নির্বাচন শান্তিতে

রবিবার রাত ন’টার পরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানানো হয়েছিল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ভোট গ্রহণে দুটি বুথে সমস্যা হওয়ায় সেখানে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুদিনে দুবার ভোট হল। তাই দেখাচ্ছেন এক ভোটার। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

দুদিনে দুবার ভোট হল। তাই দেখাচ্ছেন এক ভোটার। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

রবিবার রাত ন’টার পরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানানো হয়েছিল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ভোট গ্রহণে দুটি বুথে সমস্যা হওয়ায় সেখানে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারা রাত ও পরদিন সারা দিন এলাকায় ঘুরে পুনর্নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছিল। প্রচার ঠিক মতো হয়েছে কি না তা জানতে, বেলা দেড়টায় খোঁজ নিতে গেলেন শহরের মহকুমাশাসক রাজনবির সিংহ কপূর। তবে ভোটদাতাদের বাড়িতে নয়, তিনি যান বুথের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের জিজ্ঞাসা করতে। তাঁদের প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা খবর পেয়েছেন তো?’’ তাঁর সামনে কিছু না বললেও, উনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে একজন বলেন, ‘‘আমরা খবর না পেলে ভোট দিতে এলাম কী করে?’’

অপর এক ভোটদাতার দাবি, ‘‘ওঁর যাওয়া উচিত ছিল আরও একটু ভিতরে মানুষের বাড়িতে।’’ তাঁকে সকালে কয়েকজন কর্মী বলেন, এদিন সকাল থেকেই চড়া রোদে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। পরে দুপুরের পর তাঁদের জন্য ত্রিপল লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে বেলা পড়তে শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মাত্র দুটো বুথে ভোট হলেও শহরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বুথে যেতে তাঁর এত সময় লাগলো কেন? মাটিগাড়ার অন্য বুথটিতে অবশ্য তিনি পৌঁছাতেই পারেননি।

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘গরমে সমস্যা হচ্ছে বলে আমি জানতে পারার পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি। কারও অসুস্থ হওয়ার খবর জানা নেই।’’ যদিও অব্যবস্থা ছিল বলে অভিযোগ জানিয়েছেন শহরের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি দাবি করেন, ‘‘একেই রাতে ঘোষণার পর অনেকেই জানতে পারেনি। ফলে অন্তত যাঁরা আসেননি তাঁদের কাছে গিয়ে খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। গরমেও সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।’’

সমস্যার কথা জানান বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসুও। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন আগাগোড়াই ব্যর্থ। আগের দিন রাতে জানানোয় আমাদের গ্রামের দলীয় অনেক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি।’’ প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও।

এদিন প্রায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টণীতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ভোটের দুটি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। ভোটের হার দুটি ক্ষেত্রেই মোট ভোটারের তিন চতুর্থাংশের বেশি বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে বিরোধীদের যে জোটের সামনে বেশিরভাগ জায়গায় পিছু হঠতে হয়েছিল শাসকদলকে, পুলিশের দাপাদাপি হোক বা একদিন আগেই ভোট করেই হোক, এদিন তাঁদের তেমন ভাবে দেখা যায়নি। দুটি বুথ এলাকায় অবশ্য নিয়ম করে টহল দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের সব স্তরের নেতারা। তবে প্রশাসনের দাবি ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই। পাঁচটাতেই দুটি বুথে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ দিন ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সব পক্ষই। তবে গণনার দিনও শান্তি বজায় রাখার দাবি জানিয়েছে বিরোধীদের একাংশ।

এদিন ওল্ড মাটিগাড়া রোডের একটি বুথে ও চম্পাসারির সমরনগরের একটি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। এই দু’টি বুথেই গত ৩ অক্টোবর গোলমালের জেরে ভোটযন্ত্র ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। ওই দুটি বুথের ভোটযন্ত্রের ভোটের হিসাব উদ্ধার করা যায়নি বলে জানানো হয়েছিল। বিরোধীরাও দাবি করেন, ওই দু’টি বুথে ফের ভোটগ্রহণ হোক। ৪ অক্টোবর রাত ন’টার পরে জানানো হয় ৫ অক্টোবর ওই দু’টি বুথে নির্বাচন হবে। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কপূর বলেন, ‘‘দুটি বুথ মিলিয়ে এদিন ভোট পড়েছে ৭৯.০৬ শতাংশ। কোথাও কোনও গোলমালের খবর মেলেনি।’’ গোলমালের খবর নেই বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। তিনি বলেন, ‘‘ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ৭ অক্টোবর গণনাতেও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হবে।’’

এদিন সকাল থেকেই দুটি বুথের কাছেই জটলা দেখা যায় তৃণমূলের নেতাদের। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অলক চক্রবর্তীকে সকাল থেকেই দুটি বুথে পালা করে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। মাটিগাড়ায় সকালে হাজির হন তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল, রঞ্জন সরকার, সঞ্জয় পাঠক, সৌমিত্র কুণ্ডু, জয়দীপ নন্দীরা। সমরনগর এলাকা থেকেই কড়া নজরে রাখতে দেখা যায় জয়প্রকাশ চৌহানদের। পরে সেখানে যোগ দেন ওই নেতারাও। অলকবাবুর দাবি, ‘‘আগের দিন বিরোধীরাই গোলমাল করে পুনর্নির্বাচন করাতে বাধ্য করেছে। এদিনও তেমন কিছু না হয় তা নজরে রাখতেই এই ব্যবস্থা।’’

অন্য দলের নেতা কর্মীদের অবশ্য প্রার্থী ও স্থানীয় স্তরের নেতা ছাড়া আর কাউকে তেমন দেখা যায়নি। ফলে আগের দিনের মতো প্রকাশ্যে জোট বেঁধে প্রতিরোধের চিত্রও উধাও। যাঁরা ছিলেন, রোদের তাপ বাড়তেই তাঁদেরও আর দেখা যায়নি। কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘এদিন মাত্র দু’টি বুথে ভোট হওয়ায় পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের সমস্ত ‘ফোকাস’ এখানেই থাকায় কোনও গোলমাল হওয়ার সুযোগ কম। তা ছাড়া স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে।’’ সিপিএম নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশকে এদিন সন্তোষজনক ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। এটা আগেই নিলে পুনরায় ভোটগ্রহণ করার দরকার হত না। তবে এদিনও বহিরাগতদের এলাকায় দেখা গিয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘ভোটারদের হয়রানি হল পুলিশের ভুলেই। তাই এদিন তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri by poll municipal election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE