Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মামলা, পেটের রোগ? মুক্তি পেতে ভরসা ঘোড়ার নালে বা আংটিতে

একবার হাতে পরে নিলে, ব্যবসা থেকে চাকরি সফলতা মিলবেই। ‘আইন-বিজ্ঞানে ভরসা নেই-ভরসা যেন ঘোড়ার নালে’।

পশরা: কোচবিহার আদালতের পাশেই দোকান সাজিয়ে বিক্রি চলছে ঘোড়ার নাল, আংটি, রুদ্রাক্ষের মালার। —নিজস্ব চিত্র।

পশরা: কোচবিহার আদালতের পাশেই দোকান সাজিয়ে বিক্রি চলছে ঘোড়ার নাল, আংটি, রুদ্রাক্ষের মালার। —নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

পিছনেই আদালত। মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে নাজেহাল হয়ে কেউ বেরিয়ে আসছেন। কেউ আবার আদালতে এসেছেন বন্ধুর সঙ্গী হয়ে। তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছে না বহুদিন ধরে। চিন্তায় আছেন, কী করবেন। পাশেই, মাইক বেজে চলেছে অনবরত। একটু মন দিয়ে শুনুন, এটা হল ‘ঘোড়ার নাল’। বিনা আগুনে পিটিয়ে আংটি তৈরি করে দেওয়া হবে। হাজারো সমস্যার সমাধান। মামলা থেকে পেটের রোগ সব থেকে মুক্তি। আবার এটা হল ‘অষ্টধাতু’। একবার হাতে পরে নিলে, ব্যবসা থেকে চাকরি সফলতা মিলবেই। ‘আইন-বিজ্ঞানে ভরসা নেই-ভরসা যেন ঘোড়ার নালে’।

কোচবিহারে আদালতের সামনে গেলেই দেখা যাবে এমন দৃশ্য। পাকা সড়কের পাশে আদালতের প্রায় সামনেই পশরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। যাঁদের দোকানে ঝুলছে ছোট্ট মাইক। সেখান থেকে প্রচার চলছে। সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘোড়ার পায়ের লোহা, নানা ধরনের আংটি, অষ্টধাতু, পাথর, রুদ্রাক্ষ, গাছের শিকড়।

ভিড়ও রয়েছে দোকানে। সোমবার একটি দোকানে গাছের শিকড় ও ঘোড়ার নাল কেনা নিয়ে কথা বলছিলেন মারুগঞ্জের নারায়ণ ঠাকুর। ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করায় হাসতে হাসতে বললেন, “একটু কাজ ছিল। তাই এসেছিলাম।” ‘ঘোড়ার নাল’ কিনলেন। তিনি বলেন, “না। অন্য জিনিস কেনাকাটা করেছি। ঘোড়ার নাল আমি অনেকদিন ধরেই ব্যবহার করছি।’’

চান্দামারির আরও দুই ব্যক্তি আর-একটি দোকান থেকে কিনে নিলেন অষ্টধাতুর আংটি। ২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ওই আংটি মিলছে সেখানে। তাঁরা অবশ্য কথা বলতে রাজি ছিলেন না। পরে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন। তিনি বলেন, “আমি রাজনৈতিক দলের সদস্য। বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে আমার নামে। আদালত যেন পিছু ছাড়ছে না। এবারে অষ্টধাতু ব্যবহার করে দেখি কী হয়।”

দোকানিরা অবশ্য বার বার জানিয়ে দিচ্ছেন, নিয়ম মেনে আসল অষ্টধাতুর আংটি ব্যবহার করলে ফল একশো শতাংশ। একুশ দিনের মধ্যেই ফল পেতে শুরু করবে। তবে বিশেষ দিনে চুল-দাড়ি কাটা যাবে না। খেতে হবে নিরামিষ। ওই দোকানিদের মধ্যে দু’জন ডাওয়াগুড়ির। এক জন প্রদীপ দাস আর একজন স্বপন দাস। তাঁরা জানান, ওই ব্যবসা পারিবারিক। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে তাঁরা ওই ব্যবসা করছেন। নেপাল, বিহার সহ নানা জায়গা থেকে তাঁরা ওই আংটি, ঘোড়ার নাল সংগ্রহ করেন। স্বপনবাবু বলেন, “ফল পাচ্ছে বলেই মানুষ নিয়ে যাচ্ছে।”

বিজ্ঞানমঞ্চের পক্ষে অসীম সাহা বলেন, “আসলে কিছু দুর্বল ও অসহায় মনের মানুষ এ সবের উপর ভরসা করেন। এগুলো একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE