Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভয় কাটেনি ক্রান্তিতে

পুলিশ সূত্রের খবর, মালবাজার থানার ওসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্যকে ক্রান্তির সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মালবাজারে এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন “আমাদের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অফিসারেরা ক্রান্তি এলাকার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে কোনও প্ররোচনা মূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে কি না, সেটিও নজরে রাখছেন।”

পাহারা: ক্রান্তিতে পুলিশ পিকেট। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

পাহারা: ক্রান্তিতে পুলিশ পিকেট। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্রান্তি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

ইতিউতি গুজব চলছে এখনও। কখনও শোনা যাচ্ছে ঝোলা হাতে ফেরিওয়ালা ঘুরছে বাঁধের পাড় দিয়ে। কখনও কোনও অচেনা গাড়ি দেখে ফোন আসছে পুলিশের কাছে। বুধবার যে কটি দোকান খোলা দেখা গিয়েছিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে সেগুলির বেশির ভাগেরই ঝাঁপ ছিল বন্ধ। সন্ধের পর সুনসান হয়ে যাচ্ছে বাজার এলাকা। সব মিলিয়ে ক্রান্তি আছে ক্রান্তিতেই, চেনা ছন্দ থেকে এখনও অনেকটাই দূরে।

সপ্তাহ দুই ঘুরলেই রথের মেলা শুরু। ক্রান্তিতে সব কিছু ঠিকঠাক চলবে তো, উদ্বেগে প্রশাসন। সে কারণে আপাতত পুলিশ বাহিনী সরবে না এলাকা থেকে। ক্রান্তি ফাঁড়িতে এ দিনও দেখা মিলেছে বিশাল পুলিশ বাহিনীর। পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “প্রথম কাজ হল, যে ভাবেই হোক গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।” ক্রান্তির বাসিন্দারা রয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপে এমন ক’টি গ্রুপ রয়েছে তার তালিকা তৈরি করছে পুলিশ। সেই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক যাঁরা, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে পুলিশের থেকে। কোনও প্ররোচনামূলক বার্তা যেন না ছড়ানো হয়, তা দেখতেই নজরদারি। গত সোমবারের ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজও জোগাড় করেছে পুলিশ। সেই ছবি দেখে গ্রেফতারিও চলছে এখনও। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ৪০।

পুলিশ সূত্রের খবর, মালবাজার থানার ওসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্যকে ক্রান্তির সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মালবাজারে এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন “আমাদের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অফিসারেরা ক্রান্তি এলাকার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে কোনও প্ররোচনা মূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে কি না, সেটিও নজরে রাখছেন।”

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার ক্রান্তিতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার দুদিন আগেই ক্রান্তির কাছেই থাকা ওদলাবাড়ি চা বাগান থেকে চার কিশোরীর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার খবর আসে। তারা পাচার হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ তৈরি হয়, কিন্তু রবিবার নিজে থেকেই এই মেয়েরা আবার বাড়ি ফিরে আসে। মেয়েরা যে বাড়ি ফিরে এসেছে সে খবর চেপে গিয়ে শুধু পাচার হয়ে যাওয়ার খবর গোলমালের আগে থেকে ক্রান্তি বাজারে চাউর করে দেওয়া হয়। কারা এই অসত্য এবং আংশিক খবরকে ক্রান্তিতে এনে ছড়িয়ে দিলেন পুলিশ এখন সেই সুত্র খোঁজার চেষ্টাই করছে। এমনকি ক্রান্তিতে গোলমাল যখন বাড়ছিল তখন যারা গ্রেফতার হয়েছে তাঁদের কাছে অজ্ঞান করার রাসায়নিক রয়েছে এবং একটি গাড়িতে বেশ কিছু বস্তাবন্দি বাচ্চাও রয়েছে বলে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দিয়ে উত্তেজনাকে বহু গুণে বাড়িয়ে তোলা হয়েছিল বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে।

গত সোমবার ছেলেধরা ধরা পড়েছে এই খবর চাউর হয়ে যাওয়ার পরে কয়েকশো বাসিন্দা ক্রান্তি ফাঁড়ির সামনে জড়ো হয়। অভিযুক্তকে জনতার হাতে ছেড়ে দিতে হবে এই দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্রান্তি। ফাঁড়িতে আক্রমণ হয়, ভাঙচুর হয় পুলিশের পাঁচটি গাড়ি সহ একাধিক বাইক। ঘটনার পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। গোলমাল ছড়ানোতে মূল ইন্ধন কাদের ছিল, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।

এর মধ্যেই রথ আসছে। তার এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই পরিস্থিতিতে রথের মেলার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kranti Rumours Child Lifter Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE