Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকি খুঁজতে গোটা উত্তর ভিড় জমায় শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে  

মালদা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রত্যেক বছর শদেড়েক ঢাকি শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে আসেন। শিলিগুড়ি শহর ছাড়াও মহকুমার বিভিন্ন এলাকা, জলপাইগুড়ি, চোপড়া থেকেও পুজো উদ্যোক্তারা টাউন স্টেশনে এসে ঢাকি বুকিং করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩২
Share: Save:

চারিদিকে শুধুই ঢাকিদের মহড়া। কোথাও ময়ূরপুচ্ছ তোলা জোড়া ঢাকের আওয়াজ, কোথাও ঢাকের তালের সঙ্গে মিশেছে কাসর, করতাল। ঢাং কুড়া-কুড় আওয়াজের কাছে হার মেনেছে ট্রেনের কু-ঝিকঝিকও। পুজোর মাসখানেক আগে থেকে এভাবেই বদলায় শিলিগুড়ি টাউন রেল স্টেশনের চেনা ছবিটা। বায়না নিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকিরা জড়ো হন শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে।

পুজো উদ্যোক্তারা স্টেশনে এসে বাজনা পরখ করে ‘ঢাকি বুকিং’ করেন। বছরের পর বছর ধরে পুজোর সময় এ ভাবেই শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন বদলে যায় ‘ঢাকি স্টেশনে’। স্টেশন লাগোয়া বাগরাকোটের একটি বস্তিতে থাকেন সত্তরোর্ধ্ব ললিত পাসোয়ান। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চাশ বছরেরও বেশি শিলিগুড়িতে থাকছি। তখন থেকেই পুজোর আগে টাউন স্টেশনে ঢাকি বুকিংয়ের এই প্রথা দেখে আসছি।’’

মালদা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রত্যেক বছর শদেড়েক ঢাকি শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে আসেন। শিলিগুড়ি শহর ছাড়াও মহকুমার বিভিন্ন এলাকা, জলপাইগুড়ি, চোপড়া থেকেও পুজো উদ্যোক্তারা টাউন স্টেশনে এসে ঢাকি বুকিং করেন। দার্জিলিং, কালিম্পং সহ পাহাড়ের কিছু পুজো কমিটিও বাজনদারদের নিয়ে যান টাউন স্টেশন থেকেই। শিলিগুড়ির একাধিক নামকরা পুজো মণ্ডপে সদলবলে ঢাক বাজিয়েছেন মালদহের বামনগোলার সুজিত দাস। তিনি বলেন, ‘‘টাউন স্টেশন আমাদের কাছে লক্ষ্মী। ওই স্টেশন আমাদের থাকতে দেয়, ভাতও জোগায়।’’ সেন্ট্রাল কলোনি দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক পার্থ দে বলেন, ‘‘টাউন স্টেশনে শ’য়ে শ’য়ে ঢাকিকে একসঙ্গে পাওয়া যায়। বাড়তি পাওনা হিসাবে আমরা বাজনা পরখ করে নিতে পারি।’’

বুকিং হওয়ার আগে পর্যন্ত স্টেশন হয়ে ওঠে ঢাকিদের বাড়ি। স্টেশনের মেঝেতেই রাতে ঘুমায় তারা। কারও কারও সঙ্গে থাকে হাঁড়ি-কড়াই। স্টেশনের আশেপাশেই ব্যবস্থা করা হয় রান্নার। তবে প্রতি বছরই শতাধিক ঢাকির শৌচাগার, পানীয় জল ব্যবহার নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। কেউ কেউ রেলের শৌচাগার ব্যবহার করেন, কেউ চলে যান জেলা হাসপাতালের সামনে থাকা সুলভ শৌচালয়ে। শিলিগুড়ি টাউনের আদি স্টেশন চত্বর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে। স্টেশন চত্বরের চারিদিক আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। সংলগ্ন রেল বাগানটি এখন স্থানীয় বাজারের শৌচালয়ে পরিণত হয়েছে। স্টেশনের ঢোকার মুখেই তৈরি হয়েছে একাধিক শুয়োরের খাটাল। রয়েছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যও। সাধারণত ওই স্টেশন চত্বর এড়িয়ে চলেন সাধারণ মানুষজন।

তবে এই স্টেশন চত্বরেই ভিড়ের ঢল নামে পুজোর আগে। ঢাকি বুকিং করতে পুজোর সময় ভিড় জমায় সকলেই। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা বলেন, ‘‘আমরাতো কাউকে ডেকে আনি না। তাই পৃথক বন্দোবস্ত করতে হবে এমন ব্যাপার নেই। যাত্রীদের সুবিধার জন্য যা যা ব্যবস্থা খারা দরকার সবই স্টেশনে আছে। নিরাপত্তার দিকেও আমাদের নজর থাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhaki Durga Puja Siliguri Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE