Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নদীর জলে ‘বিষ’, মরে যাচ্ছে মাছ

তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, সঙ্কোশে প্রায় বিরল হয়ে পড়ছে বোরোলি-সহ বিভিন্ন দেশীয় সুস্বাদু মাছ।

দূষণ: ডলোমাইটে বদলে গিয়েছে জলের রং। ডায়না নদীতে। নিজস্ব চিত্র

দূষণ: ডলোমাইটে বদলে গিয়েছে জলের রং। ডায়না নদীতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

ডলোমাইট দূষণের ফলে বিপন্ন নদীও। নদীর জলে ডলোমাইট-বিষ মিশে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে নদীর মাছও। পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে হারিয়েই যাবে একাধিক নদীয়ালি মাছ।

মৎস্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভুটান থেকে নেমে আসা উত্তরবঙ্গের নদী ও ঝোরাগুলিতে দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ ভুটানের ডলোমাইট খাদান থেকে দূষিত জল বিভিন্ন নদী ও ঝোরাতে মেশার ফলেই দিন দিন এই দূষণ বাড়ছে। এ ছাড়া বাতাসে বয়ে এসেও ডলোমাইটের গুঁড়ো মিশছে নদীর জলে। এর ফলে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, সঙ্কোশে প্রায় বিরল হয়ে পড়ছে বোরোলি-সহ বিভিন্ন দেশীয় সুস্বাদু মাছ। মাছ কমায় চাহিদা-যোগানের নিয়মে, ক্রমেই দরও চড়ছে মাছের৷ নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে বোরোলি মাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ নদী-দূষণ৷ ভুটান থেকে যে নদীগুলি নেমে এসেছে তাতে দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নদীতে বোরোলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মুশকিল৷’’

এর আগে কল্যাণীর সরকারি খামার থেকে বোরোলির পোনা এনে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে ছাড়া হয়েছিল৷ কিন্তু তাতেও তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকায় বোরোলির সংখ্যা তেমন বাড়েনি বলেই দাবি মৎস্য দফতরের। আলিপুরদুয়ারের মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক সুনীল বর্মন বলেন, ‘‘ডলোমাইট-দূষিত জলে নদীতে ক্ষারের পরিমাণ বাড়ছে৷ ভুটানে, দূষণের উত্‍সস্থলে রাশ টানা না গেলে শুধু বোরোলি নয়, উত্তরবঙ্গের নদীগুলি থেকে বহু মাছই নিকট ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা৷’’ মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগে ডুয়ার্সের নদীগুলিতে বোরোলি-সহ কৈ, পুঁটি, সরপুঁটি, বাইন, টাকি, মলা, ভেদার মত বহু দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু ডলোমাইট দূষণের জেরে তিস্তা ও জলঢাকার শাখা নদীগুলিতে মাছই নেই।’’

পরিবেশপ্রেমীরা আরও বলছেন, মাছ না থাকায় পরিযায়ী পাখিরাও আর ডুয়ার্সের নদীগুলিতে ভিড় জমাচ্ছে না। নদী ও ঝোরার জলে ডলোমাইটের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সেই ঘোলা জল পান করছে না বন্যপ্রাণীরাও। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ও ঝোরাগুলির জল পানের অযোগ্য হওয়ায় জলের খোঁজে হাতি, বাইসন-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বাড়ছে মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত। পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘হলং, মূর্তি, ডায়না, ডুডুয়া-সহ ডুয়ার্সের সবকটি ছোট-বড় নদীর জলই ডলোমাইট দূষণের শিকার। ওই জলে মাছ যেমন বাঁচতে পারে না তেমনই ওই জল পশু-পাখিদের তেষ্টা মেটাতে ব্যর্থ। উত্তরের নদীগুলির উপর থেকে ডলোমাইটের এই প্রভাব দূর করতে না পারলে ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে বেশ কয়েকটি নদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dolonite River Pollution Fish River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE