গত শুক্রবার ইটাহারের হঠাৎ পাড়ায় গুলি করে তৃণমূল নেতা বিকাশ মজুমদার ওরফে মাধুকে খুনের কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। শনিবার রাতে পুলিশ এলাকার এক গাড়ির চালক সুকুমার দাসকে গ্রেফতার করলেও ওই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি যুক্ত বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। সুকুমারবাবু ঘটনার সঙ্গে কতটা যুক্ত, জিজ্ঞাসাবাদ করে তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী পুলিশের একটি দল। পুলিশ জানতে পেরেছে দুষ্কৃতীরা একটি ছোট গাড়ি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই ছোট গাড়িটিকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।
অপরাধ ঠেকাতে, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে, তারা কোন গাড়িতে আসছে সে সবের হদিস পেতে অপরাধ প্রবণ এলাকা এবং আইনশৃঙ্খলার বারবার অবনতি ঘটেছে এমন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পুলিশ। রবিবারই নতুন পুলিশ সুপার সুমিত কুমার যোগ দিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার, দুই দিনাজপুরের ডিআইজি জয়ন্ত পাল ইটাহারে হঠাৎ পাড়ায় যেখানে বিকাশবাবুকে দুষ্কৃতীরা গুলি করেছে সেই জায়গা পরিদর্শন করেন। এলাকার বিধায়ক অমল আচার্য পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান।
সোমবার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওই খুনের ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। যে গাড়িটি দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করেছে সেটি খোঁজা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ওই এলাকায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ওই এলাকাই শুধু নয় জাতীয় সড়ক, মহাসড়ক এ ধরনের রাস্তাগুলিতে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলি বেছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জেলা জুড়ে।’’ সিসি ক্যামেরা জাতীয় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা নেবে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার ইতিমধ্যেই জেলাশাসক অরবিন্দ কুমারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। জেলাশাসক, পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি এবং ইটাহারের বিধায়কের তরফেও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস নিলেছে। অমলবাবু ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। প্রয়োজনে নবান্নে প্রস্তাব পাঠিয়ে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হবে। এদিন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি কর্ণজোড়ায় সার্কিট হাউজে রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে অন্তত এক ঘন্টা বৈঠক করেন।
অতীতে নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে উত্তর দিনাজপুর। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পর্ব থেকে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে চোপড়া, ইসলামপুর, ইটাহার, রায়গঞ্জ শহর। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করেও যথেচ্ছ বোমাবাজি চলেছে। গত ২৫ অগস্ট ইসলামপুরের পন্ডিতপোতা ১ এবং চোপড়ার দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়ায়েতে বোর্ড গঠনে বোমাবাজি, গুলিতে দুই জন মারা গিয়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বোমাবাজি হয়েছে। ইসলামপুরের ধনতলা বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়। ঘটনাগুলোতে জেলার ওই সমস্ত এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এদিন পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’’
গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ ইটাহারে তাঁর ক্লাব থেকে মোটরবাইকে চেপে খামরুয়া এলাকার বাড়ি ফিরছিলেন বিকাশবাবু। পথে থানায় গিয়েছিলেন পরিচিত পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা একটি ছোট গাড়িতে করে এসে তাঁর পথ আটকায়। গুলি করে পালায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy