Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

কী ভাবে আসছে অস্ত্র, বাড়ছে চিন্তা

কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, সাধারণ অস্ত্র কয়েক ধাপ এগিয়ে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কারবারীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে শিলিগুড়ি।

এই সেই গ্রেনেড। নিজস্ব চিত্র

এই সেই গ্রেনেড। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৩০
Share: Save:

গত এক দশকে উত্তর-পূর্ব ও নেপালের জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসাবে বহুবার শিলিগুড়ির নাম উঠে এসেছে। বিহার বা পূর্বাঞ্চলের অস্ত্রের কারবারীরা এই শহরকে ‘সেফ করিডর’ হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা যে করেছে তারও প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু গত দশ মাসের ব্যবধানে দু’দফায় পরপর মর্টার শেল এবং গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় নাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকেও।

কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, সাধারণ অস্ত্র কয়েক ধাপ এগিয়ে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কারবারীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে শিলিগুড়ি। যা অত্যন্ত উদ্বেগের। গত শনিবার শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট থেকে গ্রেনেড উদ্ধারের পরে এই অনুমান আরও নিশ্চিত হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে ফাঁসিদেওয়ার মহানন্দা ক্যানালের জলে মর্টার শেল উদ্ধারের পরে তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, কোনও সেনা ঘাঁটি থেকে চোরাপথে তা আসতে পারে। ধরা পড়ার ভয়ে তা ক্যানালের জলে ফেলা হয়। তদন্ত শুরু হলেও মর্টার শেলের উৎস আজও জানা যায়নি। এ বার ভরা বাজারে মিলল গ্রেনেড। সংখ্যায় একটি হলেও তদন্তকারীরা মনে করছেন, নেপাল বা চিন থেকে চোরাপথে তা আসতে পারে। প্রায়শই ওই দু’দেশ থেকে শিলিগুড়িতে চোরাপথে সোনা ও নানা বিদেশি সামগ্রী ঢোকে। তার আড়ালে এই অস্ত্রের ব্যবসা শুরু হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ। কোনওকারণে গ্রেনেডটি পড়ে গিয়ে থাকতে পারে অথবা ভয়ে কেউ ফেলে দিতে পারে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ।

গত সপ্তাহেই চিন থেকে আসা দুই ট্রাক বোঝাই দেড় কোটি টাকার পোশাক উদ্ধার হয়েছিল। জুনে নেপাল সীমান্তের খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কিতে এক যুবককে সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) জওয়ানরা ধরেন। তার হেফাজত থেকে ৪০টি নিওজেল বিস্ফোরক, ১০০টি ডিটোনেটর উদ্ধার হয়। সবই এসেছিল মেঘালয় থেকে। ২০১৭র নভেম্বরেও প্রধাননগরের মাল্লাগুড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৩০০ জিলেটিন স্টিক এবং ২০০ ডিটোনেটর। নেপালের এক দম্পতি উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে এনে ভাড়া বাড়িতে সেগুলি মজুত করেছিলেন। প্রতিবারই শহরে পুলিশের ঢিলেঢালা নজরদারির অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির জন্য এমন করা হয়েছে কি না তা দেখা দরকার।

গোয়েন্দারা জানান, একসময় ভুটান, নেপাল ও অসমে ছড়িয়ে থাকা আলফা, নাগা, মণিপুরী, কেএলও জঙ্গিদের হাতে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রের উপস্থিতি মিলেছে। অপারেশন ‘ফ্ল্যাস আউটে’র পরে জঙ্গি শিবিরগুলি থেকে প্রচুর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার উদ্ধার হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশ নেওয়ার আগে একসময় নেপালের মাওবাদীরা ভারত-নেপাল সীমান্ত জুড়ে সক্রিয় ছিল। কয়েক বছর আগে নাগাল্যান্ড থেকে দার্জিলিং পাহাড়ে অস্ত্র আমদানির তথ্য সামনে আসে। পাহাড়েও একাধিক আধুনিক অস্ত্রের হদিশ মিলেছে। তাহলে কি ফের শিলিগুড়িকে ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল বা দেশের অন্যপ্রান্তের অস্ত্রপাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে। শনিবারের ঘটনার পরে উঠছে এমনই নানা প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grenade Police Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE