Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আত্মহত্যা নাকি খুন, ধন্দে পুলিশ

বাড়ির ছেলে বারান্দায় ধুতির ফাঁস গলায় ঝুলছে। ঘরের দরজা খোলা। এগোতেই বাসিন্দাদের চোখ পড়ে শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে ঝুলছেন বৃদ্ধের বৌমাও। ঘরের বিছানায় তখন পড়ে রয়েছে দুই শিশুর নিথর দেহ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ১২:২৪
Share: Save:

রাতভর কীর্তনের আসর সেরে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছিলেন বৃদ্ধ নৃপেন পাল। টিনের দরজার ভিতর থেকে তালা দেখে তিনি তাঁর ছেলে-বৌমাকে ডাকাডাকি করেন। নাতি-নাতনিদেরও ডাকেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে টিনের ফাঁকা দিয়ে উঁকি দেন। হঠাৎ খোলা বারান্দার কোণে দেখেন ছেলে ঝুলে রয়েছে। আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বৃদ্ধ চেঁচিয়ে ওঠেন। সেই চিৎকারে বার হয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। তার পর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, বাড়ির ছেলে বারান্দায় ধুতির ফাঁস গলায় ঝুলছে। ঘরের দরজা খোলা। এগোতেই বাসিন্দাদের চোখ পড়ে শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে ঝুলছেন বৃদ্ধের বৌমাও। ঘরের বিছানায় তখন পড়ে রয়েছে দুই শিশুর নিথর দেহ।

এই ঘটনা শিলিগুড়ি শহরের ভক্তিনগর থানার ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া পাপিয়াপাড়ার। ঘটনার অভিঘাতে আশিঘর, চয়নপাড়া, নরেশমোড় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। চারটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, স্বামী-স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। তার আগে সন্তান দু’টিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

পুলিশের অনুমান, আর্থিক কারণ অথবা কোনও সম্পর্ককে ঘিরে গোলমালের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। পরিবারের তরফেও সন্ধে পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। মৃতদের নাম বাসু পাল (৩৫), ললিতা পাল (৩২), সীমা পাল (৬) এবং বিবেক পাল (২)। বাসু পালপাড়ায় মৃৎশিল্পীর কাজ করতেন। মাঝেসাঝে আনাজও বিক্রি করতেন। তাঁর বাবাও আনাজের ব্যবসায়ী। ললিতাদেবীর বাপের বাড়ি চয়নপাড়ায়। মাটিগাড়ায় তাঁর আগের পক্ষের দু’টি ছেলে রয়েছে। প্রথম পক্ষের স্বামী মারা গিয়েছেন। পরে বাসু তাঁকে বিয়ে করেন। সীমা ও বিবেক তাঁদের সন্তান।

স্থানীয় বিধায়ক গৌতম দেব বলেন, ‘‘পুলিশ দেখুক, কী কারণে পরিবারটির এমন পরিণতি হল।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী জানান, ‘‘সম্পর্কের অবনতি, নাকি আর্থিক দেনার জেরেই এই ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

সন্দেহ দানা বেঁধেছে প্রতিবেশীদের একাংশের কথায়। তাঁরা অনেকেই দাবি করেছেন, বাসুবাবুর দু’টি হাত সামনের দিকে হাল্কা করে বাঁধা ছিল। আত্মহত্যা করার আগে অনেকেই সামনে হাত বেঁধে নেয় বলে পুলিশ দাবি করলেও খুনের ঘটনা কি না, তা-ও দেখা উচিত। মিঠু বর্মন, মঙ্গলি মোহন্তরা জানান, শুক্রবার রাতে শিশু দু’টি করতাল বাজিয়ে গান করছিল। পরে ১১টা নাগাদ একবার মেয়েটির চিৎকার শোনা যায়। বাড়ির আলো নেভান ছিল। স্বামী-স্ত্রীকে কোনও দিনই ঝগড়া করতে কেউ দেখেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটি মোটামুটি স্বচ্ছল। সম্প্রতি বাসু বাড়িতে বালি-পাথর কেনেন। পাঁচিল ছাড়াও ভাল করে শৌচাগার বানাবেন বলে পড়শিদের জানান। গত সপ্তাহে মৃৎশিল্পী কারাখানার মালিকের থেকেও হাজার দশেক টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু ঘর থেকে পুলিশ ২০০ টাকা এবং একটি মোবাইল ফোনের বেশি কিছু পায়নি। আত্মীয়রা জানান, বাসুর অল্পবিস্তর লটারির নেশা ছিল। তাতে কোনও দেনা হয়েছিল কি না, তা দেখা দরকার বলে তাঁরা মনে করেন। বাসুকে বিয়ে করার পরে ললিতাদেবীর সঙ্গে বাপের বাড়ির বিশেষ সম্পর্ক ছিল না।

নৃপেনবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রী ১৫ বছর আগেই মারা গিয়েছে। এ বার সবাই চলে গেল!’’ তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে লটারি খেলত এক সময়। এখন কী হল বুঝতে পারছি না।’’ ললিতাদেবীর মা নবমী পাল, দাদা স্বপন পাল জানান, বাসু ভাল ছেলে। তাঁরা বলেন, ‘‘কিন্তু বিয়েতে মত ছিল না বলে যোগাযোগ রাখতাম না। ললিতা টুকটাক আসত। কিন্তু কোনও সমস্যার কথা বলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE