নেতারা ব্যস্ত আন্দোলনে। পুজোর সময়ে পুর-পরিষেবা মেলা নিয়েই তাই আশঙ্কায় শিলিগুড়িবাসী।
বিরোধী পক্ষ ঘেরাও করলে পুরসভার শাসকদল রাস্তা অবরোধ করছে। শাসক দল অবস্থান করলে, বিরোধীরা মিছিল দিয়ে ঘিরছে পুরসভা। তার জেরে সংশয় ঘনিয়েছে পরিষেবা নিয়ে। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে পাইপ লাইনে সমস্যার কারণে শিলিগুড়ি শহরে কয়েকদিন জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। নিয়মিত জঞ্জাল সরবরাহ নিয়েও বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। শাসক-বিপক্ষ দু’দলই পুজোর আগে থেকেই পরিষেবা নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। একে দুর্ভোগের টাটকা স্মৃতি, সঙ্গে পরিষেবা নিয়ে দু’পক্ষের তাল ঠোকাঠুকি উদ্বেগ বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের।
পুরসভাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন বছরখানেক ধরেই দেখে আসছে শহরবাসী। গত বছর শিলিগুড়ি পুরবোর্ড বামেরা দখল করার কিছুদিন পরেই তৃণমূলের তরফে বোর্ড ‘দখল’ করার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর থেকে নানা ইস্যুতেই আন্দোলন শুরু করে দু’পক্ষ। শহরে বৃষ্টির জল জমে যাওয়া থেকে পানীয় জল সরবারহ না হওয়া, দাবি যা-ই হোক না কেন আন্দোলন পরিণত হয় বোর্ড দখল করা-এবং দখলে রাখার অভিযোগ-কৌশলে। তা যেন এখন তুঙ্গে উঠেছে।
সম্প্রতি বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব হুমকি দিয়ে বলেছেন, দুর্গাপুজোর বিসজর্নের পরেই শিলিগুড়ি থেকে বাম বিদায় হবে। পাল্টা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, প্রাণ দিয়ে পুরবোর্ড দখলে রাখবেন। আন্দোলনের ধার-ভার বাড়াতে শুরু করেছে দু’পক্ষই।
পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল ও নতুন দলনেতা রঞ্জন সরকারকে নিয়ে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। — বিশ্বরূপ বসাক
জল সরবরাহ করতে পুরসভা ব্যর্থ অভিযোগ তুলে গত ১২ সেপ্টেম্বর গাড়ির মধ্যেই মেয়রকে দু’ঘণ্টা আটকে রেখেছিল তৃণমূল। পাল্টা প্রতিবাদে শিলিগু়ড়ির হাসমিচকে অবরোধ করেছিল বামেরা। তারপরে গত বৃহস্পতিবার বকেয়ার দাবিতে রাস্তায় নামে বামেরা। গত শুক্রবার এসজেডিএ-এর সামনে অবস্থান চালায় বামেরা। এ দিন শনিবার সকালে মেয়রের ধরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব সংগঠনের েনত্ৃত্ব। পুজোর আগে তিনটি কাজের দিন যদি আন্দোলনেই চলে যায় তবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নজরদারি হবে কী করে?
পুর আধিকারিক-কর্মীদের একাংশের দাবি, পুজোর ক’দিন ছুটি থাকে, এবারে ছুটির মেয়াদ আরও বেশি। সে কারণে সেই দিনগুলিতে কী পরিকল্পনায় কাজ হবে, আগে থেকে কী কী সর্তকতা নিতে হবে, হঠাৎ কোনও জরুরি পরিস্থিতি হলে পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে গুচ্ছ বৈঠক করতে হয়।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, যে ভাবে প্রতিদিন দুপুরে-বিকেলে বর্ধমান রোড, সেবক রোডের পাশে জঞ্জালের স্তূপ ডাঁই হয়ে থাকছে, তাতে দৈননন্দিনকার পরিষেবাই ঠিকঠাক মিলছে না। পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন খোদ মেয়রও। এ দিনই পুজো প্রস্তুতির বৈঠক ছিল পুরসভায়। মেয়র অশোকবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল যে ভাবে আন্দোলনের নামে কাজে বাধা দিচ্ছে, তাতে পরিষেবায় সমস্যা হচ্ছে। পুজোর আগে কত পরিকল্পনা করতে হয়। সে সব ব্যাহত হচ্ছে।’’ তবে সমাধান কোন পথে? মেয়র বলেন, ‘‘আমি আন্দোলনের বিপক্ষে নই। তবে গণতান্ত্রিক রীতি মেনে হোক। তৃণমূল যে ভাবে কাজ ব্যাহত করতে চাইছে, তাতে সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগ করব।’’
পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতমবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘জঞ্জাল সাফাই বলে কোনও পরিষেবা শহরে আছে বলে মনে হয় না। পুজোর আগে রাস্তা সংস্কার থেকে বিসর্জনের ঘাট কোনও কিছু নিয়েই পুরসভা এখনও পদক্ষেপ করেনি। মেয়র এবং তার পারিষদরা সকলে এখন রাজনীতি করতেই ব্যস্ত।’’
রাজনীতির চেনা সমীকরণে শাসক দুষছে বিরোধীকে, বিরোধীরা আক্রমণ করছে শাসককে। পুজোর আগে শহরবাসীর পরিষেবা নিয়ে কে ভাববে? এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে শিলিগুড়িবাসীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy