Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিরল রোগে ভুগছে অভাবী শঙ্কর

চোখে রোদ চশমা থাকলে আর পাঁচ জনের সঙ্গে পার্থক্য খুব একটা বোঝার উপায় নেই৷ কিন্তু চশমা খুলে দিলে দেখা যায়, নাক আর কপালের মাঝামাঝি জায়গাটা ফুলে রয়েছে৷ চোখ দুটি নাক যেখান থেকে শুরু হয়েছে তার পাশে থাকার বদলে চলে গিয়েছে কানের কাছাকাছি৷

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

চোখে রোদ চশমা থাকলে আর পাঁচ জনের সঙ্গে পার্থক্য খুব একটা বোঝার উপায় নেই৷ কিন্তু চশমা খুলে দিলে দেখা যায়, নাক আর কপালের মাঝামাঝি জায়গাটা ফুলে রয়েছে৷ চোখ দুটি নাক যেখান থেকে শুরু হয়েছে তার পাশে থাকার বদলে চলে গিয়েছে কানের কাছাকাছি৷

এমনই একটি রোগে আক্রান্ত উনিশ বছরের শঙ্কর বর্মন৷ রোগটির নাম অস্টিওব্লাস্টোমা৷ চিকিৎসকদের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে বাই ফ্রন্টাল বনি টিউমার৷ গত আট বছর ধরে মুখ মণ্ডলের সামনের অংশে এই টিউমারটিকে বহন করেই চলছে শঙ্কর৷ চরম দারিদ্রতার মাঝেও দিন আনা দিন খাওয়া শঙ্করের বাবা-মা কলকাতা পর্যন্ত ছুটে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছিলেন৷ কিন্তু রোগ সারেনি৷ তাই ছেলেকে সুস্থ করতে শঙ্করের বাবা-মা এখন ভিন রাজ্যে যাওয়ার কথা ভাবলেও সেখানে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে সেই দারিদ্র৷

শিলিগুড়ি সংলগ্ন নৌকাঘাট এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে শঙ্কর৷ তার বাবা মলিন বর্মণ পেশায় মণ্ডপ-শ্রমিক ৷ মা মারতিবালা বর্মণ লোকের বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করেন৷ মলিনবাবু জানান, ছোটবেলা থেকেই আর পাঁচ জন সাধারণ ছেলের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল শঙ্কর৷ কিন্তু ছেলের যখন এগারো বছর বয়স তখন তাঁরা দেখেন, একটি চোখ সামান্য ফুলে থাকছে৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ছেলেকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করে নেন৷ এরপরই শঙ্করের টিউমারের কথাটি জানতে পারেন তাঁরা৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের পরামর্শে এরপর শঙ্করকে নিয়ে মলিনবাবুরা কলকাতায় বাঙুর হাসপাতালে ছুটে যান৷ প্রায় এক বছর ধরে একটি বেডের জন্য লড়াই চালানোর পরে অবশেষে সেখানেই শঙ্করের অস্ত্রোপচার হয়৷ শঙ্করের মা মারতিবালাদেবী বলেন, “এত লড়াই চালিয়ে অস্ত্রোপচার করা হলেও সুস্থ হয়নি ছেলে৷ কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায় ওর আরেকটি চোখও ফুলে যাচ্ছে৷’’ মলিনবাবু বলেন, ‘‘এরপর বেঙ্গালুরুতে ছেলের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু তাতে সফল হইনি৷” আর তারপর থেকে সময় যতই বেড়েছে শঙ্করের মুখ মণ্ডলের সামনের দিকটা শুধু ফুলেই গিয়েছে৷

টিউমারের জন্য দুই চোখের মাঝখানটা ফুলে থাকায় এই মুহূর্তে আর পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক ভাবে সব কিছু দেখতেও সমস্যা হয় শঙ্করের৷ মাঝেমধ্যেই হয় যন্ত্রণা৷ কিন্তু তখন ভরসা সেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা৷ মলিনবাবুর কথায়, “এখানকার চিকিৎসকরা বারবার আমায় বলছেন শঙ্করকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে৷ কিন্তু ওর চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই ঘর-বাড়ি বিক্রি করে আমরা প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছি। ওকে বাইরে নিয়ে যাওয়াটাও আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না৷” অভাবের কথা জানে শঙ্করও। তারও চোখ ভেসে যাচ্ছে জলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rare disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE