—নিজস্ব চিত্র।
বাবার ছোট্ট মুদি দোকান। টানাটানির সংসার। পড়াশোনার খরচ চালাতে তাই ছোটদের পড়াতে হত। তার মধ্যেও নিজের মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সেই ছাত্রী জয়িতা সাহাই এ বার নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যদিও দিনহাটা গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে এমন সাফল্য পাওয়া মেয়ের বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, সে নিয়ে উদ্বেগে গোটা সাহা পরিবারের সদস্যরা।
জয়িতার বাবা বিষ্ণুপদ সাহা সাফ বলেন, “দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীদের তালিকায় আমাদের নাম রয়েছে। যা রোজগার তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। বিজ্ঞান নিয়ে মেয়ে পড়ার খরচ চালাব কী করে, তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছি না।” বাবার পাশে দাঁড়িয়ে জয়িতা বলছে, “পড়ার খরচ চালাতে মাধ্যমিকের আগেও আমি চার জন বাচ্চাকে টিউশন করাতাম। তাতে মাসে গড়ে ৮০০ টাকা আসত। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ চালানতো শুধু এ ভাবে সম্ভব হবে না।”
দিনহাটার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বিষ্ণুবাবুর বাড়ি। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে জয়িতাকে নিয়ে তিন জনের সংসার। অভাব অনটনের মধ্যেও মেয়েকে বরাবর পড়াশোনার উৎসাহ দিয়েছেন তারা। কখনো একবেলা অর্ধাহারে থেকেছেন। পাশে পেয়েছেন কয়েকজন গৃহশিক্ষককেও। মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর মেয়ে ৬৩০ নম্বর পাওয়ায় সেই পরিশ্রমের স্বীকৃতি মিলেছে বলে খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু ফল প্রকাশের একটা রাত কাটতে না কাটতে সেই আনন্দ যেন ফিকে হতে বসেছে। বদলে জায়গা করেছে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, উৎকন্ঠা। দিনহাটা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লীনা মজুমদার অবশ্য তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, “ও আমাদের স্কুলে ভর্তি হলে উচ্চ মাধ্যমিকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা হবে।” ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে। ছোট্ট চালা ঘরে বসে অনটনের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেই স্বপ্ন পূরণের আশাতেই জয়িতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy