Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ঠাঁই হাসপাতালের বারান্দায়

শুক্রবার সকালে গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল দু’টি পুঁটলি আর জলের বোতল নিয়ে বসে রয়েছেন এক মহিলা।

অপেক্ষা: হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নাজিম খাতুন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নাজিম খাতুন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০৬:০৭
Share: Save:

স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিকের হাত ধরে বেরিয়ে এসে সমস্যার সাগরে পড়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা।

বর্তমানে সেই প্রেমিকের বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়ে হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বছর পঁয়ত্রিশের নাজিম খাতুন জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে ওই হাসপাতাল চত্বরই তাঁর বাড়িঘর। তাঁর কথায় কয়েক বছর আগেও তাঁর স্বামী ও সংসার ছিল। সেই সময় তাঁর থেকে কমবয়সি এক যুবকের প্রেমে পড়েন তিনি। তাঁর হাত ধরেই স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে আসে। এত বছর সব কিছু ঠিক থাকলেও তাল কাটে গত রবিবার। তাঁর প্রেমিক কিছু না জানিয়ে ভাড়া বাড়িতে তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। বাড়িতে মজুদ খাবার শেষ হয়ে যায়। বাকি পড়ে ভাড়াও। তার জন্য বাড়ির মালিক বাড়ি থেকে বের করে দেন। শেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই, এখন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

শুক্রবার সকালে গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল দু’টি পুঁটলি আর জলের বোতল নিয়ে বসে রয়েছেন এক মহিলা। তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে এল তাঁর জীবনের কথা। নাজিম জানালেন, তাঁর বাবার বাড়ি জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বিয়েও হয়েছিল ওই এলাকায়। মোবাইলে তাঁর থেকে প্রায় ছ’বছরের ছোট মঙ্গলু মহম্মদের প্রেমে পড়ে সে। মঙ্গলু উত্তর বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শান্তিনগর জোরামপাড়া এলাকায় থাকে। প্রেমের টানে তিনি স্বামীর বাড়ি ছাড়েন। বাড়ির অমতে প্রেমিকের সঙ্গে চলে আসায় বিষয়টি মেনে নেয়নি বাড়ির সদস্যরা। মানতে পারেনি প্রেমিকের বাড়ির লোকজনও। তাই বাধ্য হয়ে ভাড়াবাড়িতে উঠতে হয় তাঁদের। নাজিমের অভিযোগ, প্রেমিকের বাড়ির লোকদের প্ররোচনায় সেখানেও শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাতো তাঁর প্রেমিক। প্রেমিকের বাবা মহম্মদ মহারুল, প্রেমিকের বোনের স্বামী মহসিন মহম্মদ, প্রেমিকের বোন শেফি খাতুনের কথাতেই তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। নাজিম খাতুনের আরও অভিযোগ, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাঁর উপর অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গত রবিবার তাঁকে কিছু না জানিয়ে তাঁর প্রেমিক মঙ্গলু মহম্মদ ভাড়া বাড়িতে তাঁকে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আবার সে দিনই বাড়ির মালিক বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীর পরিজনদের বিশ্রামাগারে আশ্রয় নিয়েছেন।

আশ্রয়ের জন্য গত বুধবার মঙ্গলুর বাড়িতে যান তিনি। তাঁর অভিযোগ তাঁকে দেখে মঙ্গলুর বাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। দ্বিতীয়বার সেখানে গেলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাঁর। এর পর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে, সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে হলদিবাড়ি থানায় প্রেমিক মঙ্গলু-সহ পরিবারের অন্য তিন সদস্যের নামে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাড়ির অমতে প্রেমিকের সঙ্গে চলে আসায়, বাপের বাড়িতেও যেতে পারছেন না বলে জানালেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে হলদিবাড়ি থানার আইসি দেবাশিস বসু জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় তাঁদের তরফে কারও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Haldibari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE