Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধটা খেলা নয়, বলছেন কাশ্মীরে নিহত জওয়ানের ভাই

সেনা জওয়ানদের দেহ পড়ে থাকতে দেখে সারারাত ঘুমোতে পারেননি কোচবিহারের গারোপাড়ার শিক্ষক দীপেন সাংমা। বার বার তাঁর মনে পরেছে দাদা রমেনের কথা। তাঁর দাদাও কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছিলেন কাশ্মীর থেকে। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

কয়েকদিন ধরেই ছটফট করছেন ওঁরা। পুলওয়ামার ঘটনার পর বার বার তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন কার্গিলের যুদ্ধের স্মৃতিতে। সেনা জওয়ানদের দেহ পড়ে থাকতে দেখে সারারাত ঘুমোতে পারেননি কোচবিহারের গারোপাড়ার শিক্ষক দীপেন সাংমা। বার বার তাঁর মনে পরেছে দাদা রমেনের কথা। তাঁর দাদাও কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছিলেন কাশ্মীর থেকে।

দীপেনবাবু জানান, তাঁর দাদা রমেন সেনা জওয়ান ছিলেন। কার্গিলের যুদ্ধে তিনি লেহ্‌ সীমান্তে ছিলেন। যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। বিজয় দিবসও পালন হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে একবার ফিরেও যান তিনি। এর পরেই কাশ্মীরে মৃত্যু হয় তাঁর। সেনাবাহিনী দেহ নিয়ে পৌঁছয় গ্রামে। সেই দিন গোটা গ্রামের মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। সবার চোখে জল ছিল। তিনি বলেন, “আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে দাদা সেই সময় একা রোজগার করতেন। সেই টাকায় সংসার চলত। তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান ছিল। আমরা সবাই কী করে দিন কাটিয়েছি তা আমরাই জানি।”

রমেনের মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারেননি তাঁর বাবা জ্যোতিন্দ্র সাংমা। ছ’মাসের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। পরের দেড় বছরের মধ্যে মারা যান তাঁর মা বিনোদিনী দেবীও। এখন রমেনবাবু সন্তানরাও বড় হয়েছে। দীপেন বলেন, “এমন ভাবে কেউ চলে গেলে খুব কষ্ট হয়। তাই এমন দেশ প্রয়োজন যেখানে নিজেদের মধ্যে কোনও শত্রু থাকবে না। তাহলে বাইরের শত্রুরাও আর সুযোগ পাবে না। এর পরেও কিছু হলে যোগ্য জবাব দিতে হবে।”

যেদিন রমেনবাবুর দেহ কফিন বন্দি হয়ে কাশ্মীর থেকে ফিরেছিল বাড়িতে, সেদিন যেন সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা সবাই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। দীপেনবাবু বলেন, “মনে হয়েছিল আমিও চলে যাই সীমান্তে। সেনাতে চাকরির খুব ইচ্ছেও ছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি। তবে সেই সময় যা কষ্ট আমরা পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। এখনও এমন ঘটনা ঘটলে ওইদিনটির কথা মনে হয়।” তিনি আরও বলেন, “এমন কিছু করা প্রয়োজন যাতে দেশের মধ্যে আর জঙ্গি কার্যকলাপ আর কেউ করতে না পারে।” তবে পুলওয়ামার ঘটনার পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কিছু মন্তব্য ও তার কয়েক জায়গায় হামলা নিয়ে ক্ষোভের কথাও জানান দীপেনবাবু। তিনি বলেন, “কিছু মানুষ সহজে প্রচার পাওয়ার জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যা পারছেন তা লিখছেন। কেউ কেউ আবার তা নিয়ে হইচই করছেন। এ সব কিছুই বন্ধ হওয়া উচিত। যুদ্ধটা কোনও খেলা নয়। মৃত্যুর কষ্টটা তাঁর পরিবারের মানুষরা ছাড়া কেউ বোঝেন না।” এই বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মত তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pulwama Pulwama Attack Pulwama Terror Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE