Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কম্পন-আতঙ্কে পালাতে গিয়ে জখম পড়ুয়ারা

মিনিট দুয়েকের ভূমিকম্পে মালদহ জুড়ে একাধিক স্কুলের পড়ুয়ারা গুরুতর ভাবে জখম হল। শনিবার দুপুরে হঠাৎ এই কম্পনে কালিয়াচকের সুজাপুর নয় মৌজা হাই স্কুলের সিঁড়ির রেলিং ভেঙে প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়া জখম হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের আঘাত গুরুতর। আহত অবস্থায় তারা মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কালিয়াচকের সুজাপুরের স্কুলে আহত এক ছাত্রী মালদহ মেডিক্যালে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

কালিয়াচকের সুজাপুরের স্কুলে আহত এক ছাত্রী মালদহ মেডিক্যালে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

মিনিট দুয়েকের ভূমিকম্পে মালদহ জুড়ে একাধিক স্কুলের পড়ুয়ারা গুরুতর ভাবে জখম হল। শনিবার দুপুরে হঠাৎ এই কম্পনে কালিয়াচকের সুজাপুর নয় মৌজা হাই স্কুলের সিঁড়ির রেলিং ভেঙে প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়া জখম হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের আঘাত গুরুতর। আহত অবস্থায় তারা মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের সময় তড়িঘড়ি নামতে গিয়ে স্কুলের সিঁড়ি থেকে পড়ে আরও দু’টি স্কুলের ১৫ জন পড়ুয়া আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের আঘাত গুরুতর। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিনের ভূমিকম্পের ফলে জেলা জুড়ে শতাধিক স্কুল পড়ুয়া আহত রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের আঘাত গুরুতর। এ ছাড়া জেলায় তেমন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।’’

ও দিকে ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে তিনতলার ছাদ থেকে নামার সময় সিডির রেলিং ভেঙে ৩২ জন ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে। মালদহের রতুয়ার ভাদো বিএসবি হাই স্কুলের ঘটনা। তাদের প্রত্যেককেই রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ৩০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও দু’জনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছ। পাশাপাশি ছেলের বাইকে চেপে বাড়ি ফেরার সময় বাইক উল্টে এক প্রৌঢ়ারও মৃত্যু হয়। মৃতা বরোদা মণ্ডল (৭০) রতুয়ার ছবিলপাড়ার বাসিন্দা। সামসি থেকে বাইকে চেপে বাড়ি ফেরার সময় ছেলের বাইক থেকে উল্টে ওই ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পরিবারের দাবি। যদিও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি প্রশাসনের কর্তারা।

রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, ‘‘ভাদো স্কুলে আতঙ্কের জেরেই ঘটনাটি ঘটে। আর মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।’’

এ দিন মালদহের ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভায় ভোট ছিল। দুপুরে ভোট দেওয়ার জন্য বুথে বুথে লম্বা লাইন ছিল। সেই সময় হঠাৎ করে কম্পন শুরু হয়। প্রথমে কেউ বুঝতে না পারলেও পরে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। লাইন থেকে ভোটাররা বেড়িয়ে আসেন। বাড়ির মহিলা শঙ্খ বাজাতে শুরু করে দেন।

ইংরেজবাজার শহরের মকদমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সামান্য চিড় ধরে। এ ছাড়া শহরে তেমন ক্ষতি হয়নি বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তবে কালিয়াচকের সুজাপুরের নয় মৌজা হাই স্কুলের সিঁড়ির রেলিং ভেঙে গিয়ে বহু পড়ুয়া আহত হয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় দ্বিতীয় পিরিয়ড চলছিল। হঠাৎ স্কুলের ভবন কেঁপে ওঠায় ছাত্রছাত্রীরা নীচে নামার চেষ্টা করে। সেই সময়েই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস ঘর থেকে নীচে নামার সিঁড়িটি ভেঙে যায়। এই দুই শ্রেণির প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়া আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে রুকিয়া আফসানা, আমিনা খাতুন, মহম্মদ সারফরাজ, নুর জামান ও আমিনুল শেখকে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করানো হয়। এরা প্রত্যেকেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। বাকিদের সুজাপুর গ্রামীণ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেন।

স্কুলের পড়ুয়াদের এই অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক নাজেহার হোসেন। তিনিও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের বহু পড়ুয়া আহত হয়েছে। এই স্কুল ছাড়াও জালালপুর হাই স্কুল এবং দরিয়াপুর বাইসি হাই মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা ভূমিকম্পের সময় সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে জখম হয়েছেন।’’ তাঁদের মধ্যে সেনাউল শেখ এবং তাবজুলের অবস্থা গুরুতর। দরিয়াপুর বাইসি হাই মাদ্রায়ার প্রধান শিক্ষক তাবজুল হোসেন বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় পড়ুয়ারা হুড়োহুড়ি করে উপর থেকে নীচে নামতে যায়। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কম্পনে একে অন্যের উপর পড়ে যায়। তাদের আমরা হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ দিন আহত পড়ুয়াদের দেখতে হাসপাতালে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি জখম পড়ুয়াদের চিকিৎসার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষকে। তিনি বলেন, ‘‘ভূমিকম্পে বেশ কিছু স্কুলের পড়ুয়া আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসার বিষয় আমরা দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE