Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আঁধারেও লাইন আধারের

যুবক মনো আলির বাড়ি কোচবিহারের সাতমাইলে। কয়েক বছর ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই তৈরি করে নিয়েছিলেন আধার কার্ড। পরে ওই কার্ডে একাধিক ভুল ধরা পড়ে। বাড়ি ফিরে তা সংশোধনের জন্য কয়েকদিন ঘুরেছেন ইতিউতি। কাজ হয়নি।

 নাগরিক: কোচবিহারে আধার কার্ডের জন্য একটি ব্যাঙ্কের সামনে লাইন। বুধবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

 নাগরিক: কোচবিহারে আধার কার্ডের জন্য একটি ব্যাঙ্কের সামনে লাইন। বুধবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

 নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

কারও রাত জেগে কেটেছে ডাকঘরের সামনেই। কেউ ভোররাতে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) লোকসভায় পাশ হওয়ার পরে এনআরসি হচ্ছেই, এমনই প্রবল হাওয়া বইছে রাজ্যের সীমান্ত জেলা কোচবিহারে। সেই হাওয়া পৌঁছে গিয়েছে ওঁদের কানেও। এনআরসি-টা ঠিক কী, সেটা ওঁরা এখনও বোঝেন না। শোনেননি ক্যাব-এর কথাও। তবে বাড়িতে নথিপত্র না থাকলে যে দেশহীন হতে হবে, সেই বার্তা আছে ওঁদের কাছে। কেউ কেউ শুনেছেন ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’র নামও। ওঁরা মনো আলি, যোগেন্দ্র সেন, কণিকা কার্যী, মুন্না হোসেনরা। কেউ কোচবিহারের প্রধান ডাকঘরের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউ আবার আধার কার্ডের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়েছেন।

যুবক মনো আলির বাড়ি কোচবিহারের সাতমাইলে। কয়েক বছর ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই তৈরি করে নিয়েছিলেন আধার কার্ড। পরে ওই কার্ডে একাধিক ভুল ধরা পড়ে। বাড়ি ফিরে তা সংশোধনের জন্য কয়েকদিন ঘুরেছেন ইতিউতি। কাজ হয়নি। শেষে এই ডাকঘরের খোঁজ পেয়েছেন। তিনদিন ঘুরে গিয়েছেন। ফের মঙ্গলবার রাতে এসেছেন ডাকঘরের সামনে। সেখানেই কোনওরকমে রাত কাটিয়েছেন। বুধবার সকালে তিনি সুযোগ পান তিনি। তিনি বলেন, “শুনলাম, একদিনে ২০ জনের উপরে নাম নথিভুক্ত হয় না। প্রচুর ভিড় হয়ে যায়। তাই কতদিন আর ঘুরব? তাই রাতেই চলে এসেছি। আশা করি, আজ কাজ হবে।” পরে ফের বললেন, “চারদিকে যা পরিস্থিতি, তাতে সব কাগজপত্র ঠিক রাখা দরকার।”

ওই ডাকঘরেই সোনারির তরুণী কণিকা কার্যী তাঁর বাবার সঙ্গে নতুন আধার কার্ডের জন্য এসেছেন। তাঁরা ভোর ভোর পৌঁছেছেন। এনআরসি বা ক্যাব কোনওকিছুই ঠিকমতো জানেন তাঁরা। কণিকার বাবা বললেন, “গ্রামের অনেকেই বলেছেন মেয়েটার আধার কার্ড জরুরি। না হলে অসুবিধে হতে পারে। তাই এসেছি। দু’দিন ঘুরে যাওয়ার পরে আজ সুযোগ পেলাম।” এখানেই মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছেন পুণ্ডিবাড়ির আমিনা খাতুন। তাঁর মেয়ে মাসুদা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দু’জনেরই কার্ডে জন্মতারিখ ভুল রয়েছে। আমিনা বললেন, “সংশোধন করতে এসেছি। আর দেরি করলে সমস্যা হতে পারে।”

পুরনো পোস্ট অফিস পাড়ায় একটি ব্যাঙ্কের সামনেও লম্বা লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে চান্দামারির মুন্না হোসেন। তিনি বললেন, “এনআরসি ঠিক কী আমি জানি না। তবে আধার কার্ডে নাম ভুল থাকায় সমস্যা হতে পারে বলে অনেকে জানিয়েছে। তাই ঠিক করাতে এসেছি। অনেক লাইন পড়েছে। আজ হবে কিনা বুঝতে পাচ্ছি না।” ব্যাঙ্কের সামনেই লাইন দিয়েছিলেন দিনহাটার গীতালদহের যোগেন্দ্র সেন। তিনি তাঁর ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বললেন, “দু’দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পাইনি। তাই আজ কোচবিহার শহরে এসেছি। কার্ড করেই বাড়ি ফিরব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE